এয়ারপোর্টে পৌঁছে বোর্ডিং পাস নেওয়ার জন্য সবাই মিলে যখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাউন্টারে দাঁড়াল, তখনই বাবার বেজার মুখটি ওদের চোখে পড়ল। বোর্ডিং পাস পাওয়ার পর বাবা যখন দেখলেন সবাই মিলে বাংলাদেশ যাচ্ছেন, তখনই তিনি রেগে গেলেন আর বললেন তোরা বাংলাদেশ যাচ্ছিস জানলে আমি যেতাম না। আসলে বাবার চোখে ঠিক রাগ না, অভিমান। মেয়েরা বলল, ‘বাবা তুমি তো আমাদের কত জায়গায় নিয়ে গেছ। আমরা তো কোনো দিন না করিনি, তাহলে একবার আমাদের কথামতো চলো, দেখ আমরা তোমাকে নিরাশ করব না।’ আমজাদ সাহেবের স্ত্রী বললেন, ‘মেয়েরা এত করে বলছে, চলো না?’ স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আমজাদ সাহেব বুঝলেন, তিনি ছাড়া বাকি সবাই জানে বাংলাদেশে যাওয়া হচ্ছে।

বিমানে ওঠার পর কেবিন ক্রুরা এসে আমজাদ সাহেব ও তাঁর স্ত্রীকে ফার্স্ট ক্লাসের সিটে নিয়ে গেল। অভিমানের কারণে আমজাদ সাহেব আগে বোর্ডিং পাসটি ভালো করে দেখেননি। এখন তাকিয়ে দেখেন স্বামী–স্ত্রী দুজনেরই ভিআইপি বোর্ডিং পাস। মেয়েদের বললেন, এত টাকা দিয়ে তোরা কেন ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কাটলি। তখন কেবিন ক্রুরা তাঁদের দুজনকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানাল আর বলল, বাংলাদেশ সরকার বিনা মূল্যে সম্মানস্বরূপ আপনাদের আপগ্রেড করে দিয়েছে।

কারণ, আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্যার! এ কথা শুনে আমজাদ সাহেবের বুকটা অনেক দিন পর দেশের জন্য ছাৎ করে উঠল আর আনন্দে চোখে পানি চলে এল। মেয়েরা তখন বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘বাবা তোমরা আরাম করে বস, আমরা পেছনে গিয়ে বসছি।’ বাবা বললেন, তোরা এখানে বসবি না? মেয়েরা বলল, ‘আমরা তো মুক্তিযোদ্ধা না বাবা’ বলে মুচকি হেসে চলে গেল। আমজাদ সাহেব দুনিয়ার অনেক বড় বড় এবং দামি বিমানে আগে ভ্রমণ করেছেন; কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে এই প্রথম উঠেছেন। বিমানের ভেতর এত সুন্দর ও আরামদায়ক, যা তিনি এর আগে খুব কমই দেখেছেন। নিজের দেশের এত সুন্দর বিমান দেখে উনি একই সঙ্গে বিস্মিত ও খুশি হলেন।

ইমিগ্রেশন শেষে ব্যাগেজ সংগ্রহ করার পর বাইরে বের হতে হতে উনি দেখলেন আগের মতো কেউ এসে ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছে না। তা ছাড়া গাড়ির জন্যও সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, যে বাসে যাবে, সে বাসের লাইনে, যে ট্রেনে যাবে, সে ট্রেনের লাইনে, যে ট্যাক্সিতে যাবে, সে ট্যাক্সির লাইনে আর যাদের প্রাইভেট কার আসছে, তারা অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে তিনি এ রকম দেখেছেন যে এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে; কিন্তু বাংলাদেশেও এমন আছে দেখে তিনি একটু বিস্মিত হলেন। এয়ারপোর্ট থেকে এত রাতে বের হয়ে তাঁরা কই যাবেন, কীভাবে যাবেন, সেটা চিন্তা করে একটু আতঙ্কিত হলেন।

তখন মেয়েরা বলল, ‘বাবা, আমরা অনলাইনে এক মাসের জন্য ফার্নিচারসহ বাসাভাড়া করে রাখছি আর সেই বাসা থেকে একটি গাড়ি ইতিমধ্যে এয়ারপোর্টে থাকার কথা আমাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য।’ বাবা তখন আরও ভয় পেয়ে বললেন, তোরা না জেনে না দেখে এ রকম ইন্টারনেটে বাসা ঠিক করে রাখছিস? যদি কোনো বিপদ হয়? যদি তোদের মেরে লুটপাট করে সব নিয়ে যায়? মেয়েরা হেসে বলল, বাবা তুমি অন্য দেশে যাওয়ার সময় অনলাইনে বাসা, গাড়ি সব যখন বুক করে যাও, তখন কি তোমারে সব মেরে নিয়ে চলে যায়?

অন্য দেশে যদি এমন না হয়, তাহলে বাংলাদেশে কেন এমন হবে বাবা? আর এটা তো তোমার নিজের দেশ! এ রকম কথা বলতে বলতেই হঠাৎ কোট টাই পরা একজন তরুণ হাতে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসে বললেন, ‘আপনারা নিশ্চয় আমজাদ সাহেবের পরিবার? আমি গাড়ি করে আপনাদের বিমানবন্দর থেকে বাসায় পৌঁছে দেব’ বলে তিনি সবার ব্যাগেজগুলো ঠেলতে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এলেন। পরিবারের সবাই মিলে তখন খেয়াল করল যে প্ল্যাকার্ডটিতে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ‘আমজাদ সাহেব ও তাঁর পরিবারকে স্বাগত’!

মেয়েদের যখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, তারা বলল এটা বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের গাড়ি। তখন তারা বাবাকে উল্টা প্রশ্ন করল যে বাবা তুমি জান না বাংলাদেশের তরুণদের এই স্ট্যার্টঅ্যাপগুলো এখন বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি যেখানে সিলিকন ভ্যালির বড় বড় ইনভেস্টররা বিনিয়োগ করেছে। ওদের বাবা নিজেও একটি বিলিয়ন ডলার কোম্পানির ফাউন্ডার এবং সিইও।

বাবা নিজেও অনেক স্ট্যার্টঅ্যাপে ইনভেস্ট করেন; কিন্তু চাপা অভিমানের কারণে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে সব সময়ই এড়িয়ে যেতেন। বাবা বিনিয়োগকারী হয়ে এত বড় কোম্পানিগুলোর নাম জানেন না বলে মেয়েরা বাবাকে পচিয়ে হাসাহাসি করল। তবে সবাই জানে যে বাবা এগুলো কমবেশি জানেন বাংলাদেশি কোম্পানি সম্বন্ধে এবং শুধু মনের ভেতরের চাপা দুঃখের কারণে এসব নিয়ে বেশি কথা বলতেন না।

ফাইল ছবি

বাসায় যাওয়ার পর আমজাদ সাহেব আবারও ধাক্কা খেলেন। এত সুন্দর করে সাজানো ও দামি বাসা দেখে তিনি মেয়েদের বললেন তোরা এত দামি বাসা নিতে গেলি কেন? নাকি এটাও তোদের বাংলাদেশ সরকার ফ্রি দিয়ে দিছে বলে উনি একটু মুচকি হাসলেন। মেয়েরা বলল অনেকটা ফ্রি–ই বাবা।
বাংলাদেশ সরকারের একটা প্রজেক্ট আছে, যেখানে কম খরছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশিরা এসে নিজের দেশে আরাম করে বেড়াতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যথাসম্ভব সুযোগ–সুবিধা ও প্রণোদনা দেওয়া হয়, যাতে তারা নিজের দেশে এসে দেশকে জানতে পারে এবং পছন্দমতো বিনিয়োগও করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্যের পাশাপাশি নিজেরাও লাভবান হতে পারে। সরকারের এ উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশিদের সঙ্গে তাদের অনেক বিদেশি বন্ধুবান্ধবও এসে নিয়মিত বিনিয়োগ করে। তা ছাড়া যেসব প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা এখনো বেঁচে আছেন, তাঁদের যথাযথ সম্মান দেখানোর জন্য এবং তাঁরা যাতে জীবনের বাকি সময়টুকুতে মাঝেমধ্যে দেশে এসে সুন্দরভাবে কাটাতে পারেন, তার জন্য সরকারের এই উদ্যোগ।

রাতের বেলা আমজাদ সাহেবের ঘুমটা খুব ভালো হলো। ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্নে তাঁর ছোটবেলার অনেক মজার মজার স্মৃতি ও পছন্দের জায়গাগুলো দেখতে পেলেন তাই ঘুম থেকে উঠে উনি অনেক ফুরফুরে মেজাজে আছেন। স্বপ্নে পুরোনো জায়গাগুলো দেখে তাঁর মনে হলো উনি নিজের আপন জায়গায় চলে এসেছেন। তাই নাশতার টেবিলে খেতে বসে তিনি বউ আর মেয়েদের প্রস্তাব দিলেন যে ওদের কোনো প্ল্যান না থাকলে সবাই মিলে তাঁর ছোটবেলার জায়গাগুলো দেখতে যেতে চান।

বাবার ফুরফুরে মেজাজ দেখে মেয়েরাও খুশি হলো আর বলল এবারের ভ্রমণটা ওদের বাবার জন্য ডেডিকেটেড; তাই তিনি যেখানে যেখানে যেতে চান, সেসব জায়গায়ই যাওয়া হবে। তাই নাশতা খেয়ে সবাই মিলে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢোকার পর শুরুতেই চোখে পড়ল বিশাল বড় ইনফরমেশন সেন্টার। এটাও কিছু তরুণের উদ্যাগে, যার ফলে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন একটি করে ইনফরমেশন সেন্টার আছে। এর ফলে যেকোনো দর্শনার্থীরা ওই নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে গাইডের সাহায্যে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে পারেন। ইনফরমেশন সেন্টারে পর্যটকদের ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য অনেক তরুণ-তরুণী কাজ করছেন।

আমজাদ সাহেব হেল্প ডেস্কে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার জন্য কী সাহায্য পেতে পারেন। হেল্প ডেস্ক থেকে বলা হলো, তাঁদের একজন ফ্রি গাইড ক্যাম্পাসের শাটল দিয়ে সবকিছু দেখাতে পারবেন। হেল্প ডেস্কের সাহায্যকর্মী আমজাদ সাহেবের নামটি কম্পিউটারে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠল তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি দাঁড়িয়ে তাঁকে আবারও সম্মান জানালেন। বললেন, ‘আপনি আমাদের স্যুভেনির শপ থেকে যেকোনো কিছু ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে কিনতে পারবেন।’

ক্যাফেটেরিয়াতে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অনেক বিদেশি খাওয়াদাওয়া করছেন। ছেলেটি বললেন, ক্যাম্পাসে সব সময় অনেক ধরনের কনফারেন্স এবং অনুষ্ঠান হয়, বিদেশিরাও আসেন। আমজাদ সাহেব লক্ষ করলেন, প্রতিটি খাবারের পাশে খাদ্য উপকরণের নাম লেখা। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অ্যালার্জি ফ্রেন্ডলি, ভিগান এবং স্পেশাল মিলেরও ব্যবস্থা আছে। খাওয়াদাওয়া শেষে স্যুভেনির শপ থেকে নিজেদের এবং গিফটের জন্য কেনাকাটা করলেন।

মজার ব্যাপার হলো, ইনফরমেশন সেন্টার, ক্যাফেটেরিয়া এবং স্যুভেনির শপসহ অন্যান্য সব জায়গায় যেসব তরুণ-তরুণী কাজ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাঁরা পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি হিসেবে এসব কাজ করেন। ভ্রমণ গাইড ছেলেটির সঙ্গে ছবি তুলে তাঁরা বিদায় নিয়ে বিকেলে ফেরার পথে টিএসসির পাশে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে বাসায় ফিরলেন। অনেক দিন পর দেশীয় কায়দায় ঘোরাঘুরি, খাওয়াদাওয়া, এবং গানবাজনা দেখে তাঁদের সবার খুব ভালো লাগল।

এভাবে প্রতিদিনই নতুন নতুন জায়গায় বেড়ানো চলছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় তাঁরা স্বল্প সময়ের মধ্যে সিলেট, চট্টগ্রাম, এমনকি কক্সবাজারও ঘুরে এলেন।

আগে যেখানে ঢাকা-সিলেট হাইওয়েতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লেগে যেত, এখন সেখানে দুই ঘণ্টারও কম সময়ে যাওয়া যায়। চার-ছয় লেনের রাস্তাগুলো যেমন সুন্দর, তেমনি নিরাপদ। রাস্তাঘাটের দিকনির্দেশনাগুলো বিদেশের মতো বাংলা ও ইংরেজিতে দেওয়া আছে বলে পর্যটকদেরও গাড়ি চালাতে কোনো সমস্যা হয় না। যেকোনো দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী কেউ চাইলেই ওখানে ড্রাইভিং করতে পারেন।

বিমানযোগে ঢাকা-সিলেট বা ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা–যাওয়া করলে হয়তো যাতায়াতের সময়টা চার ভাগের এক ভাগ হয়ে যেত; কিন্তু তাঁরা যেহেতু রাস্তাঘাট দেখতে পছন্দ করেন, তাই প্রাইভেট কারে করেই ঘোরাঘুরি করলেন। হাইওয়ের সার্ভিস সেন্টারগুলোও আর্কিটেকচারালি এত সুন্দর করে নকশা করা, দেখে মনেই হয় না দেশে আছেন।

বাংলাদেশের এত সব পরিবর্তন দেখে আমজাদ সাহেব মেয়েদের প্রশ্ন করলেন, কীভাবে এত পরিবর্তন হলো। যেখানে আগে নিয়মিত শিশু হত্যা, প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের লুটপাট ও মারামারি, ঈদের সময় নিয়মিত লঞ্চডুবি, রাস্তাঘাট নির্মাণে দুই নম্বরি, দুর্বলের ওপর অত্যাচার ও অন্যায়ভাবে জায়গার দখলদারিত্ব হতো। তখন মেয়েরা বললেন, বাবা এত সব পরিবর্তন কিন্তু এক দিনে হয়নি।

রাষ্ট্রপ্রধান তরুণদের বললেন, তারা যেহেতু সব সমস্যার সঠিক সমাধান করতে পারছে, তাই ভবিষ্যতে যাতে তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বও নেওয়ার জন্য যেন প্রস্তুত হয়। আমজাদ সাহেব তখন মেয়েদের বললেন, তোরা এত কিছু কীভাবে জানিস? উত্তরে ছোট মেয়ে বলল, বাবা আমার থিসিসের জন্য একটি কেস স্টাডি নিয়েছিলাম, যেখানে আমার কাজ ছিল একটি উন্নয়নশীল দেশ কীভাবে তরুণদের ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে তা জানার।

যেহেতু বাংলাদেশে ১০ বছর ধরে নিয়মিতভাবে অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে সব থেকে ভালো করছে, তাই আমি বাংলাদেশকেই কেস স্টাডি হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। আরও মজার ব্যাপার হলো, বাবা আমার এই থিসিসটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় আমি পুরস্কার হিসেবে পরিবারসহ বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য স্কলারিশপ পেয়েছি। এ কথা শুনে আমজাদ সাহেবের বুকটা খুশিতে আরও বড় হয়ে গেল, স্কলারশিপের জন্য না, মেয়েরা বিদেশে থেকেও দেশের জন্য যে মমতা দেখিয়েছে তা দেখে। দেশের জন্য মেয়েদের এই আন্তরিকতা দেখে এবং জায়গায় জায়গায় উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে বাবার মনের সব দুঃখ ও অভিমান চলে গেল।

বাবা আরও বললেন, এখন থেকে সবাই মিলে প্রতিবছর বাংলাদেশে বেড়াতে আসবেন। বাবার মুখে এ কথা শুনে মা–মেয়েসহ সবাই একসঙ্গে হু হু করে হেসে উঠল এবং বলল অবশ্যই বাবা আমরা সবাই নিয়মিত বাংলাদেশে আসব আর তুমি চাইলে তোমার কিছু কিছু ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশের স্টার্টআপেও করতে পার। তাদের হাসির কারণ হলো যে সরকারের উদ্যোগটি আসলেই কাজ করছে, যার প্রমাণ হলেন তাদের বাবা, যিনি এখন নিয়মিত দেশে আসতে চান এবং দেশীয় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান।

ওপরের গল্পটি কাল্পনিক, যা একটু চেষ্টা করলেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিশ্বের অনেক সম্ভাবনাময় দেশে এ রকমটি ঘটেছে। এ রকম অনেক দেশ ছিল, যাদের কিছুই ছিল না এবং শুধু ভালো নেতৃত্ব ও সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে আজ তারা উন্নত দেশগুলোর একটি। আমাদের দেশ সেই তুলনায় অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের অনেক কিছুই আছে, যা কাজে লাগিয়ে বাকি উন্নয়নগুলো করা সম্ভব। আমাদের যে রকম আছে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, তেমনি আছে প্রচুর জনবল। আমাদের শুধু তার সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে। এ জন্যই আমি বলেছি, একটু অন্য রকম বাংলাদেশ, অর্থাৎ যা আছে তার সিংহভাগই ঠিক রেখে আমরা আমাদের পরিবর্তনটি করতে পারি। আমরা কি সবাই মিলে সেটি পারব না?

* লেখক: আবু আউয়াল মো. শোয়েব, শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে আমেরিকাতে রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here