প্রবাস বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ ডেস্ক :: তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। সিকিম পাহাড়ে টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে বাংলাদেশের নীলফামারীর ডালিয়া ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি নিয়ন্ত্রণে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। ঈদের আগেই তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে এমন আভাসে  তিস্তা অববাহিকার নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার চরের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এতে চর এলাকায় কয়েক হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অপরদিকে উজানে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের খবর পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তিস্তা নদীর গভীরতা হারানোয় একাধিক নতুন চ্যানেল তৈরি হয়েছে। সিকিমের পাহাড়ে ভারি বৃষ্টির কারণে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ থেকে শুক্রবার ও শনিবার দুদিনে ৯ হাজার ৪৮৮ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে। সূত্র বলছে, পানিপ্রবাহ আরও বৃদ্ধি পেলে গজলডোবা থেকে আরও পানি ছাড়া হবে। সেখানে ৪৮টি গেটের মধ্য ৬টি খোলা রাখা হয়েছে। জানা যায়, গজলডোবা ব্যারাজ থেকে ছাড়া পানি মূল নদী খাত দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে তিস্তা নদীর বামতীর এলাকা গৌরীকোণের নতুন চ্যানেল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজ থেকে উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। তিস্তায় পানি বাড়ায় তিস্তা অববাহিকার চরখড়িবাড়ি, ঝাড়সিংহেশ্বর, বাইশপুকুর,  দহগ্রাম,  গড্ডিমারী, দোয়ান, সানিয়াজান নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি,  ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি,  মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোলমু-া, শৈলমারী,  কৈইমারী, আলমবিদিতর, গঙ্গাচরা তীরবর্তী চরে বাদামক্ষেত, আমনের বিছন ধান, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক।

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা ছকমল হোসেন বলেন, শুনতাছি তিস্তার পানি বাড়বে। পানি বাড়লে আমাদের জায়গাজমির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে। দোয়ানী গ্রামের কৃষক আনারুল হক বলেন, ভারতে তিস্তার বন্যা হয়েছে। এ পানি যদি আমাদের দেশের দিকে ছাড়ে তাহলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। গড্ডিমারী ইউনিয়নের মেম্বার জাকির হোসেন বলেন, ভারতের সিকিমে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। সেই বন্যার পানি তিস্তা নদীতে প্রবেশ করলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম বলেন, ভারতের সিকিমে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২.১৫ সেন্টিমিটার। শনিবার  বিকেল ৬টায়  দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। বেলা ৩টায় ৫১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার বিপৎসীমা ২৮.৭৫ সেন্টিমিটার। শনিবার  বিকেল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার। এর আগে বেলা ৩টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)  নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে টানা ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিস্তার পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট থেকে জানান, আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।  এসব এলাকার বাদাম খেত, ধান, বীজতলা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

সিলেটে ফের বন্যার আশঙ্কা ॥ স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস জানান, অব্যাহত বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। এ অবস্থায় আবারও বন্যার আশঙ্কা করছেন এই অঞ্চলের মানুষ। শনিবার সকাল ৯টায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি দুই পয়েন্টে বিপদ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২০২ মিলিমিটার এবং সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে শনিবার সকাল ৯টায় বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। সকাল ৯টায় এই পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

অন্যদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে শুক্রবার থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর এই দুই পয়েন্ট ছাড়াও সবকটি পয়েন্টে পানি বাড়ছে। এছাড়া সারি গোয়াইন, লোভা, ডাউকি ও ধলাই নদীর পানিও ফের বাড়তে শুরু করেছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হয়েছে। শনিবার সকালে ভারতের আবহওয়া বিভাগ জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫১৩ মিলিমিটার। সিলেট অঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here