প্রবাস বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ ডেস্ক :: সিলেট অঞ্চলে বর্তমানে দ্বিতীয় দফা বন্যা চলছে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলায় এই বন্যার জন্য ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ হলেও এর বাইরে আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প মেঘালয়ের পাহাড়ের সাথে ধাক্কা লেগে ওপরে উঠে যায়। সেখানে ভারী হয়ে বৃষ্টি আকারে পড়তে শুরু করে। সে জন্য অনাদিকাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে আসছে ভারতের চেরাপুঞ্জি অঞ্চলে। যার প্রভাবে সিলেট অঞ্চলে বন্যা অতীতে বহুবার হলেও বর্তমান সময়ের মতো মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হননি সিলেট বাসী।
বর্তমানে একদিন একটু ভারী বৃষ্টি হলেই সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা এবং বন্যা দেখা দেয়। অথচ অতীতে সিলেটে সারা মাস বৃষ্টিপাত হয়েছে সুর্যের মুখ দেখা যায়নি তারপরও নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। আজকের মতো নগরীর নালা নর্দমাও এতো বড় এবং পরিচ্ছন্ন ছিলো না। যতই বৃষ্টিপাত হোক পানি সুরমা নদীতে চলে যেত।
বর্তমানে সুরমা নদীর পরিস্থিতি ভিন্ন। একটু বৃষ্টিপাত হলেই সুরমা নদীর কুল প্লাবিত হয়ে পানি নগরীর ভিতরে প্রবেশ করে এবং বন্যা সৃষ্টি হয়।
সিলেটে বন্যা হওয়ার অন্যতম চারটি কারণ:
১. তিস্তা নদীর সুইচ গেইট খুলে দেওয়া। ২ সুরমা-কুশিয়ারা নদী ভরাট হয়ে যাওয়া ৩. কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন সড়ক তৈরী করা ৪. জাফলং এলাকার নদী পাথরে ভরাট হওয়া এবং পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা।
তিস্তা নদীর সুইচ গেইট খুলে দেওয়াঃ
ভারতে তিস্তা ব্যারেজের গাজলডোবা অংশের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
“তিস্তার পানি এখন ৭০ সেন্টিমিটারের বেশি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একারণে তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় ‘রেড এলার্ট’ জারি করা হয়েছে,” নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসফাউ-দৌলা বলেছেন, “আমাদের তিস্তা ব্যারেজে যে ফ্লাড বাইপাস আছে, মানে নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমা ছাড়ালে ওই বাইপাস খুলে যায়, সেটি ভেসে গিয়েছে।”
মি. দৌলা বলেছেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে নদীতে পানি বাড়তে থাকে। আজ বুধবার সকাল ৬টার সময় প্রথম বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে।
“ভারতীয় অংশে গত কয়েকদিন প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে যাওয়ায়, তারা তিস্তা ব্যারেজের গজলডোবার ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে। যে কারণে আমাদের এখানে হঠাৎ এমন পানি বৃদ্ধি ঘটেছে,” তিনি বলেন।
সুরমা: সিলেট অঞ্চলের প্রধান নদী সুরমা এবং এর শাখা নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সিলেট জেলার ২৬টি ছোট-বড় নদী ও অভ্যন্তরীণ শাখা নদীগুলো বছরের পর বছর নৌযান চলাচলের মাধ্যমে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও সে চিত্র ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে। গভীরতা কমে যাওয়ায় পানির ধারণ ক্ষমতা ও পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে ।
কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন সড়ক:
কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের তিনটি উপজেলার ( ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হয়েছিল ২৯.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ একটি সড়ক। বিশেষজ্ঞদেরমতে এই সড়ক এখন সিলেট এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের দুর্দশার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুরা নদীর পানি যথাযতভাবে নামতে পারছে না। যার ফলে অকাল বন্যা দেখা দিচ্ছে, হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।
জাফলং এলাকার নদী পাথরে ভরাট হওয়া:
সিলেটের পর্যটন এলাকা জাফলং। এখানে ডাউকি, পিয়াইনসহ বেশ কয়েকটি নদী রয়েছে। এই নদীগুলোতে বর্ষাকালে উজান থেকে নেমে আসে পাথর আর পাথর। শীতকালে মানুষ এই পাথর উত্তোলন করতো। আবার বর্ষাকালে নতুর পাথর চলে আসতো।
পরিবেশবাদীদের তথাকথিত আন্দোলনের ফলে গত প্রায় সাত বছর থেকে এখানে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। যার ফলে জাফলং এলাকার এই নদীগুলো পাথরে ভরাট হয়ে নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। কোন কোন নদী তার গতিপথও পরিবর্তন করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
নদীগুলো পাথরে ভরাট হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট এবং জৈন্তাপুর অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়।
প্রতিকার:
সিলেট জেলা এবং সিলেট মহানগরকে বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে হলে কার্যকরভাবে সুরমা এবং কুশিয়ারা নদী খনন করতে হবে।
দ্রুত পানি নেমে যাবার জন্য কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন সড়কে অন্তত আরো দশটি সেতু নির্মাণ করতে হবে।
জাফলং এলাকার নদীগুলো থেকে সনাতন পদ্ধতি পাথর উত্তোলন শুরু করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।