হাইডের সাবেক কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব মোবশ্বর উল্লাহ


হাইডের সাবেক কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব মোবাশ্বর উল্লাহঃ 

কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব মোবাশ্বর উল্লাহ ১৯৫৬ সালে সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার অন্তর্গত সিংগেরকাছ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম হাজী সাইফ উল্লাহ অ মাতার নাম হাজী আয়মুনা বিবি । তিনি সিঙ্গেরকাছ প্রাইমারী স্কুল ও এক্লিমুর রাজা জুনিয়র হাই স্কুলে  লেখাপড়া করেন। তখনকার সময় যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধাজনক ছিল না বিদায় পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হত । তার বাড়ী থেকে হাই স্কুল প্রায় ২ মাইল দূরে ও রামসুন্দর হাই স্কুল প্রায় ৫ মাইল দূরে ছিল । ১৯৬৬ সালে তিনি যখন অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত তখন তার বাবার মাধ্যমে জানতে পারলেন যে তিনি ইচ্ছে করলে তার সন্তানদের বিলাতে আনতে পারবেন। তার পিতা তাকে বিলাতে নিয়ে আসার জন্য সব কাগজপত্র তৈরি করেন। তখনকার সময় মোবাশ্বর উল্লার পিতা ওল্ডহ্যাম শহরে বসবাস করতেন। এরপর তিনি পাসপোর্ট তৈরি করেন এবং ১৯৬৬ সালের ৬ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান । তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর । তিনি প্রথম ওল্ডহ্যামের ৫৭ বেলমন্ট ষ্ট্রীটে বসবাস শুরু করেন । ১৯৬৬ সালে তিনি যখন প্রথম এদেশে আসেন তখনকার সময় বাংলাদেশী লোকজনের কোনো পরিবার এদেশে বসবাস করতে দেখেননি, দুই একজন হঠাৎ চোখে পড়ত কিন্তু এদের হিসেব নাই বললেই চলে। ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ সরকার একবার লেবার ভাউছার দিয়েছিল, সেই সুবাদে বাংলাদেশ থেকে সব পুরুষ  লোকরাই এদেশে আসেন । কোন মহিলা লেবার ভাউছার নিয়ে আসতে দেখা যায়নি বা শোনা যায়নি । তখনকার সময় দুই বেডরুমের ঘরে ৮ থেকে ১০ জন লোক বসবাস করত, কিছু  লোক দিনে ও কিছু লোক রাত্রে কাজ করতো । ঘরে শুয়ার জন্য সিফট ব্যবস্থা চালু ছিলো। আবহাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে মোবাশ্বর উল্লাহ বলেন তখনকার সময় প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল প্রচুর বরফ পড়তো, প্রায়ই বরফের উচ্চতা একফুট ছাড়িয়ে যেতো, একজন আরেকজনের হাত ধরে পথ চলতে হতো । তখনকার দিনে বাংলাদেশী বা ইন্ডিয়ান দোকান তেমনটি ছিল না এখন যেভাবে লক্ষ্য করা যায় । ওল্ডহ্যামের প্রথম গ্রসারী দোকান রচডেল রোডে অবস্থিত ছিল যার স্বত্বাধিকারী ছিলেন মনা উল্লাহ তার দেশের বাড়ি বিশ্বনাথ থানার অন্তর্গত দৌলতপুর গ্রামে। সব বাংলাদেশীরা তার দোকান থেকে কেনাকাটা করত।

 

১৯৬৬ সালে জিনিসপত্রের দাম তেমন ছিলোনা কিন্তু মানুষের নিকট পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে ক্রয় ক্ষমতা তেমন ছিল না । উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন যাদের ছিল না বাজার থেকে মাছ ক্রয় করে খাওয়ার কিন্তু তখনকার সময় পুকুর বা নদী খাল-বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এবং মানুষ তা শিকার করে খেতে পারতো । মাছ শিকারের জন্য বরশী, জাল, কোকা, দর ইত্যাদি ব্যবহার করে মাছ শিকার করে খেতে পারতো । এখন বিল হাওর এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় মৎস্য চাষ হওয়ায় আগের মত অবাধে মাছ শিকার করা যায় না । বিশেষ করে গরিব লোকেরা এখন পুরুটা বেকায়দায় আছে । পাকিস্তান সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষের অশান্তির সময়ে সরকারি সাহায্য প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত । তিনি আরো বলেন, আইয়ুব খানের শাসন আমলে যখনই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিত তখন প্রচুর পরিমাণে সরকারি সাহায্য মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হতো । বিশেষ করে রিলিফের মাল পাওয়া যেতো । কোন মানুষ রিলিফের সাহায্য থেকে বাদ পড়তে দেখা যায়নি । বর্তমানে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত । সরকারী রিলিফের সাহায্য গরীবের দরজায় পৌঁছায় না । উনার অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছেন যারা দরিদ্র সীমার নিচে বাস করছেন, কিন্তু কোনদিন সরকারি কোন সাহায্য নেননি । রিলিফের মাল বণ্টন নিয়ে অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে তিনি বলেন সুবিধাবাদীরা লুটপাট করে খাচ্ছে । কৃষির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন তখনকার সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চাষাবাদ হত । নিজের বাড়ির পাশে জমিতে চাষাবাদ হতো, নিজের জায়গা না থাকলে অন্যের জায়গায় বর্গা নিয়ে লোকজন চাষাবাদ করেছে, ফলন করেছে এবং সার্বিকভাবে কৃষি উৎপাদন করেছে। নিজের উৎপাদিত ফসল দ্বারা অনায়াসে ৬ মাস চলে যেত । ধনী লোকেরা অলস তাই চাষাবাদ না করে বাজার থেকে ফসল ক্রয় করত । মৌলানা সিকন্দর আলীর অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন তাদের প্রচেষ্টায় স্থানীয় বিদ্যালয়ের মাধ্যমে অনেক লোক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পেয়েছেন । তিনি আরও বলেন অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছিল, পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া আসা করা, রাস্তা-ঘাট ভাঙ্গা ছিল একটু বৃষ্টিতে পানি জমে যেতো । একটা অতিরিক্ত লুঙ্গি সাথে নিয়ে যেতে হত। স্কুলে যাওয়ার পথে একটা লুঙ্গি পুরোটা ভিজে যেতো । স্কুলে পৌঁছার পর স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে লুঙ্গি পরিবর্তন করতে হত । ছোট ছোট খাল গুলিতে ব্রিজ না থাকায় পানিতে পানির মধ্যে নেমে কাপড় ভিজিয়ে স্কুলে যেতে হতো । আর কোন সময় কেউ যদি দয়া করে বাঁশের সাঁকো তৈরী করে দিত, তা আবার দুষ্ট লোকেরা তা সাকোকে ভেঙ্গে দিত । লেখাপড়ায় তিনি খুবই মনোযোগী ছিলেন, বিশেষ করে মা বাবা সব সময় উনাকে উৎসাহ দিয়েছেন । যদি এদেশে না আসতেন তাহলে তিনি পড়ালেখা করতেন । মোবাশ্বর উল্লাহ্‌র পিতা সাইফুল্লাহ ১৯৫৭ সালে বিলাতে আসেন । উনার পিতা অত্যন্ত সাধারণ লোক ছিলেন এবং দেশে থাকাকালীন সময়ে কৃষি কাজের সাথে জড়িত ছিলেন । নিজের জমিতে ফসল ফলাতেন এবং কোন কোন সময় অন্যের জমিতে ও চাষাবাদ করতেন । উনার বাবা করাচী হয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন এবং সর্বপ্রথম ফুটবল স্টেডিয়ামে লাইন মারকার হিসেবে কাজ করেছেন । তার বাবা ১৯৫৭ সালে ৭ পাউন্ড বেতনে কাজ করেন ।  ১৯৬৩ সালে বিলাতের রানী এলিজাবেথ পাকিস্তান সফরের গেলে আইয়ুব খানের বিশেষ অনুরোধে লেবার ভাউচার চালু করেন । তখনকার সময় যতেষ্ট লোক বিলাতে আসতে সক্ষম হয়েছিল । এর অন্যতম কারণ হিসেবে ভিসা প্রথা সহজ ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন । মানুষ বিলাতে আসার সাথে সাথে কাজ ও পেয়ে যেত কারণ ফ্যাক্টরিতে তখন কাজের অভাব ছিল না । তার শিক্ষক মৌলানা সিকন্দর আলী একটি ফরম পূরণ করে দেন এবং তিনি সেই ফরমে স্বাক্ষর করে তা ব্রিটিশ দূতাবাসে প্রেরণ করেন । অতঃপর তিনি ইন্টারভিউ তারিখ সম্মিলিত পত্রটি পান এবং শিক্ষকদের শরণাপন্ন হন । তখন তিনি বলেন, তোমার বয়স তো কম – এই লেটার অন্য কাউকে দিয়ে দাও । যখন তোমার বয়স হবে তখন তুমি যাওয়ার সুযোগ পাবে । ঐ পত্রটা তখন তার বাবার বন্ধু ও তালই উনাকে দিয়ে ছিলেন ।

আলহাজ্ব মোবাশ্বর উল্লাহ’র  পিতা রাবার ফ্যাক্টরি থেকে একটি রেফারেন্স নিয়ে সব কাগজপত্র পাঠিয়ে দেন এবং সেই অনুযায়ী মোবাশ্বর উল্লাহ আবেদনপত্র দাখিল করেন । ঢাকা ব্রিটিশ দূতাবাসে তখনকার সাক্ষাৎকার প্রণালী খুবই কঠিন ছিলো । তখনকার দিনে ব্রিটিশ হাইকমিশনের ইমিগ্রেশন অফিসার অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করত – যেমন কি খেয়েছ ? কাল রাত কোথায় ঘুমিয়ে ছিলে ? কার সাথে এসেছ ? তোমাদের ঘরে কয়টি দরজা জানালা আছে ? তোমাদের বাড়িতে গতকাল কে এসেছিল ? তিনি মনে করেন সম্ভবত দুভাষীর কারণে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হতে পারে । উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, তিনি তার ভাইকে নিয়ে ব্রিটিশ দূতাবাসে গিয়েছিলেন তখন এক দুভাষী ভুল ইন্তারপ্রেটিং করায় তা তিনি আপত্তি করেন । পরে দুভাষী লজ্জা পেয়ে চলে যান ।

মোবাশ্বর উল্লাহ বলেন, ১৯৬৬ সালে তিনি যে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন, এটা ছিলো তার জীবনের সর্বপ্রথম অফিসিয়াল সাক্ষাৎকার যা চিরজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে । সাক্ষাৎকার চলাকালীন সময়ে উনি অনেকটা ভীত হয়ে গিয়েছিলেন, কারণ অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে । মনে সংশয় ছিল যদি কোন ভুল তথ্য পরিবেশন এর কারনে ভিসা না হয়, তবে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পূর্বে উনার পিতা উপদেশ দিয়েছিলেন সত্য বলার জন্য। ১৪ বছর বয়সে ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত ছিল তা বোধগম্য নয় । কিন্তু তারপরও মোবাশ্বর উল্লাহ’র মত অনেক কিশোর ফর্মালিটিস মেনে সফলতাযর সহিত স্বাক্ষর রেখেছেন । ঘন্টা দেড় ঘন্টা ইন্টারভিউ হতো এবং দূতাবাসে অনেক লম্বা লাইন ছিলো। ঐ দিনই তিনি ভিসা পান । সিলেটে ফেরার পথে তার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং ভিসা নিয়ে বাড়িতে আসার পর ভাই বোন সবাই কান্নাকাটি শুরু করেন । এই দৃশ্য দেখে তিনিও বিচলিত হয়ে পড়েন এবং মাকে বলেন, যে তুমি বাবার সাথে যোগাযোগ করে তাকে বলে দাও আমি বিলাতে যাব না।

যাই হউক পরবর্তীতে সবাই শান্ত হন এবং কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে টিকিটের জন্য সুরমা ট্রাভেলস এর মালিক সবুজ মিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন । তখন সমুজ মিয়া মোবাশ্বর উল্লাহকে    বলেন “ভাতিজা এত ছোট বয়সে লন্ডন যাইতেছ অনেক ঠান্ডা সেখানে গিয়ে কি করবে” ।  তখন টিকিটের মূল্য ১৬০০ রুপিজ, পিআইএ বিমানযোগে ঢাকা থেকে বিলাতের উদ্দেশে রওনা দেন । তিনি এতো ছোট ছিলেন যে এয়ার হোস্টেস তাকে কোলে করে নিয়ে সিটের মধ্যে বসিয়ে তাকে সিট বেল্ট লাগিয়ে দেন । ঐ বিমানে তার সাথে পরিচিত কোন লোক ছিল না । তখনকার সময়ে অল্প সংখ্যক লোক বিদেশ সফর করত । ওইদিনের ফ্লাইটে বাংলাদেশী যেসব লোক ছিলেন তাদেরকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করে বলা হয় যাতে মোবাশ্বর উল্লাহ’র দিকে একটু খেয়াল রাখার জন্য। বিমান উড্ডয়নের প্রাক্কালে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছিলেন । করাচিতে যাত্রা বিরতি করেন । করাচী থেকে বোয়িং ৭৪৭ বিমানে হিথ্রোর উদ্দেশ্যে রওনা দেন । তিনি যখন হিথ্রো বিমানবন্দরে এসে পৌছান তখন ইমিগ্রেশন অফিসার তাকে প্রশ্ন করেন – কিন্তু ইংরেজি ভাষা দখল না থাকায় তিনি পুরোপুরি বিষয়টি বুঝতে পারেন নাই । পরে দুভাষী তাকে প্রশ্ন করেন এখানে তোমাকে নেওয়ার জন্য তোমার বাবা বিমানবন্দরে এসেছেন কিনা। মোবাশ্বর উল্লাহ মাথা নেড়ে উত্তর দেন, হ্যাঁ এসেছেন।

আস্তে আস্তে যখন তিনি বিমানবন্দর থেকে বাহির হয়ে এসেছিলেন তখন তিনি অনেক লোকের ভিড়ের মাঝে তার বাবাকে হাত নাড়তে দেখেন ‌। উনার বাবা বিমানবন্দরে আদর করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেন । উনাকে বিমান বন্দর থেকে নেওয়ার জন্য তার বাবা ওল্ডহ্যাম থেকে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে নিয়ে যান । এই ট্যাক্সি ড্রাইভার এর নাম আব্বাস আলী । আব্বাস আলী ভিসা সংক্রান্ত কাগজপত্র যেমন ডেক্লারেশন তৈরির ব্যাপারে উনার বাবাকে পুরু সহযোগিতা করেন।

উল্লেখ্য আব্বাস আলী একজন শিক্ষিত লোক ছিলেন বিধায় উনি তার এলাকার লোকজনের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত ব্যাপারে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন । মোবাশর উল্লাহ’র বাবা তাকে কিছু খাবার হাতে দেন, কিন্তু বিমান ভ্রমনের অনেকটা ক্লান্ত থাকায় তিনি গাড়িতে বসার পরপরই ঘুমিয়ে পড়েন।

বিমান বন্দরে তিনি ইন্ডিয়ান লোক লম্বা দাড়ি ও মাথায় পাগড়ি পরা দেখে মোবাশ্বর উল্লাহ জানতে চেয়েছিলেন উনারা মৌলানা কি না । তার উত্তরে বাবা বললেন এরা শিখ জাতি ‌। উনার বাবা যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরের বাড়া মাথাপিছু ২ পাউন্ড ৫০ পেন্স ছিল । ৩/৪ জন লোক একত্র হয়ে খাওয়া দাওয়া করতেন । তখনকার দিনে টাটকা শাকসবজি তেমন পাওয়া যেতো । দোকানে শাক সবজি ক্রয় করার সময় মানুষ দুই তিন বার চিন্তা করত, কারণ আয়ের তুলনায় খরছ করতে হবে তরিতরকারি অপ্রতুল থাকায় দামটা একটু বেশি ছিল। বাজার করার সময় দেশের পরিবারের কথা মাথায় রাখতেন । এখানে উপযুক্ত সব পয়সা যদি খরছ করে ফেলেন তাহলে দেশে আর টাকা পাঠানো যাবে না এবং পরিবার চালানো দুঃসহ হয়ে উঠবে ।

আগেকার দিনে লোকজন কাজ কর্ম করে যা উপার্জন করতেন তা থেকে সিংহভাগ অর্থ সঞ্চিত রেখে তা দেশের পরিবার-পরিজনের নিকট প্রেরণ করতেন । অনেক লোক কষ্ট উপার্জন থেকে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে দেশে জায়গা জমি ক্রয় এবং বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রেরণ করেছেন । তাই তারা এদেশে খরছের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতেন । প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করতেন না।

উনার বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি চেষ্টা করে ব্যর্থ হন । বর্তমানের সাথে তুলনা করে বলেন ইংরেজি না জানলে এখন যেভাবে দুভাষী শিক্ষক দ্বারা স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়া যায়, তখনকার সময় তা ছিল এক দুষ্কর কাজ ।

উনার মামাতো ভাই লন্ডনের পার্শ্বে সলসবারীতে পাঠিয়ে দেন । তার মামাতো ভাইয়ের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ছিল, সেখানে তিনি দুই থেকে আড়াই বছর কাজ করেন । তিনি সেখানে কাজ ও ভাষা শিক্ষা নেন এবং কোন ব্যাথা ছাড়াই কাজ করেন । সেখানে থাকা খাওয়া ফ্রি ছিল এবং মাঝে মধ্যে তিনি হাত খরচের জন্য পাঁচ/ছয় পাউন্ড পেতেন।

আগেকার দিনে যারাই ব্যবসা করেছেন তারা শিক্ষিত ও জ্ঞানী লোক ছিলেন । এখন তো ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক সহজ হয়েছে এবং প্রত্যেক শহরে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে । আগেকার দিনে ব্যবসা অনেক লাভজনক ছিল কারণ প্রতিযোগিতা কম ছিল । যখন তার বয়স ১৬ ছিল তখন তার মামাতো ভাইকে বলেন উনি আর বিনা বেতনে কাজ করবেন না ।  কাজও অনেক শিখেছেন তাই তাকে একটি চাকরি খুজে দেওয়ার জন্য । কারণ হিসেবে তিনি বলেন উনার বাবা একা ফ্যাক্টরিতে কাজ করে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে ভালো করে বাংলাদেশের পরিবার চালানো যাবে না, তাই তিনি কাজ করে তার বাবাকে সাহায্য করতে চান।

বয়স্ক লোকদের জন্য ফ্যাক্টরিতে অনায়াসে কাজ পাওয়া যেতো, কিন্তু কম বয়সী লোকদের রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্যত্র কাজ পাওয়া যেতোনা । ফ্যাক্টরির কাজ অত্যন্ত কঠিন ছিল তাই তিনি বলেন, যদি তিনি ফ্যাক্টরিতে কাজ পেলেও কাজ করা কঠিন হতো । হয়তো তিনি পারতেন না ।

তিনি দেখেছেন তার বাবাসহ অনেক বয়স্ক লোক ফ্যাক্টরিতে কাজ করত । যাই হোক তার এলাকার একজন লোকের ব্যবসা ছিল লিভারপুলে । তার বাবা ঐ লোকের সাথে আলাপ করেন, লোকটার নাম দীপক চৌধুরী এবং তার রেস্টুরেন্টের নাম আশা এখনো বিদ্যমান । আশা রেস্টুরেন্টে তার কাজ হয়ে যায় । তিনি ১৯৬৮  সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কমি ওইয়েইটার হিসাবে কাজ শুরু করেন । প্রতি সপ্তাহে বেতন ছিল ৬ পাউন্ড এবং থাকা-খাওয়া ছিল ফ্রি । ১২ থেকে ১৪ বছর সেখানে কাজ করেন ।

বিলাতে আসার পূর্বে যুক্তরাজ্য সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলনা । বয়সও তেমন ছিলনা, অল্প বয়সে বিলেত এসেছেন । তিনি অতীত দিনগুলির কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি যখন তার বাবার সাথে বাইরে বেড়াতে যেতেন, তখন শ্বেতাঙ্গ লোকজন দোকান থেকে সুইট ক্রয় করে দিত এবং খুব আদর করতো । কোন সময় কাউকে ঘৃণা চোখে দেখেছে বলে মনে হয়নি । উনার বাবা যে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন সেখানকার শ্বেতাঙ্গ কর্মীরা তার বাবাকে বলতো তার ছেলেকে ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য । তিনি ফ্যাক্টরিতে গেলে শ্বেতাঙ্গ লোকেরা তাকে আদর করে চার-পাঁচটি সুইটের প্যাকেট কিনে দিত, যা ছিল অতুলনীয় । মধ্যখানে বর্ণবাদী সমস্যা দেখা দিয়েছিল কিন্তু আগেকার দিনে শ্বেতাঙ্গ লোকজন রাস্তায় কোন লোক দেখলে এগিয়ে আসত এবং বলতো তোমার কি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন ?

দীপক চৌধুরীর বাবা সিলেট জজ কোর্টের উকিল ছিলেন । দীপক চৌধুরী মোবাশ্বর উল্লাহকে ইংরেজি শেখানোর জন্য কাজের জায়গায় উনার সাথে থাকার জন্য এবং কাস্টমারের সাথে ইংরেজি বলার চেষ্টা করা । তিনি ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করার জন্য দীপক চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় কলেজে ভর্তি হন । উনার সাথে তার বন্ধু ফারুক মিয়াকে সাথে নিয়ে কলেজে যান । মোবাশ্বর উল্লাহ কলেজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, এক শিক্ষক তার কাজের জায়গায় কাস্টমার হিসেবে আসে এবং আমাদেরকে কলেজ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন তোমরা ভালো ইংরেজি জানো এখানে কিসের জন্য এসেছো । তখন ঐ শিক্ষক বলেন তোমরা ইংরেজি কথা বলতে পারো, তাই এখানে সময় নষ্ট করা মোটেও সমীচীন হবে না । মোবাশ্বর উল্লাহ কর্মস্থলে পদোন্নতি হতে থাকে, এক পর্যায়ে তিনি কফি ওয়েইটার থেকে হেড অফ স্টাফ মনোনীত হন । আশা রেস্টুরেন্টে সহকর্মীদের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সেফ হিসাবে কাজ করতেন আবু তালীব (মিরপুর বাড়ী), হবিগঞ্জের শুভ্র কান্তি নাথ এসিস্টেন্ট সেফ, গোয়ালা বাজারের রফিক মিয়া, নোয়াখালী এলাকার আরো দুজন লোক কিচেন পোরটার হিসেবে কাজ করতেন।

অয়েইটার হিসেবে যারা কাজ করেছেন তারা হলেন বারিন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস (ফেঞ্চুগঞ্জ), মসলে উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা), হোসাইন আহমেদ (ঢাকা), বাবুল আহমেদ অন্যতম। ১৯৬৯ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশ যান এবং ছাতক থানার অন্তর্গত ছোট পলি গ্রামের সোনাফর আলীর মেয়ে আফিয়া খাতুনকে বিবাহ করেন । ১৪/১৫ মাস দেশে থাকার পর তিনি বিলাতে ফিরে আসেন এবং পুনরায় আশা রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তার স্ত্রী ও বড় ছেলেকে এ দেশে নিয়ে আসেন । লিভারপুলে তিনি কর্মস্থলের পাশে একটি বাড়া হিসেবে এক ঘর নেন এবং প্রতি সপ্তাহে ১২ পাউন্ড রেন্ট পরিশোধ করেন । বন্ধু বান্ধবের মধ্যে তিনি প্রথম বিয়ে করেন এবং সর্বপ্রথম ড্রাইভিং টেস্ট পাস করেন এবং সর্বপ্রথম তার স্রীকে এ দেশে নিয়ে আসেন । এ তাঁর জীবনে একটি কৃতিত্ব বলে দাবি করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি লিভারপুলের কাজ ছেড়ে দিয়ে চেসার এলাকার দক্ষিন ফিল্ড এলাকায় ১৬০০ পাউন্ড দিয়ে একটি দুই বেডরুমের বাড়ি ক্রয় করেন । তখনকার সময় টয়লেট বাহিরে ছিল, সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম ছিল না ।

চেসার এলাকায় আসার একমাত্র কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে তার বাবা তখন এলাকায় কাজ করতেন এবং তারই অনুরোধে এখানে চলে আসেন । দক্ষিণ ফিল্ড রোডে একটি মিলক ফ্যাক্টরি ছিল । একদিন তিনি সেখানে কাজের সন্ধানে যান এবং ম্যানেজারের সাথে সরাসরি স্বাক্ষাত করেন । তিনি তিন সপ্তাহের জন্য ট্রাইয়াল হিসেবে একটি কাজ পেয়ে যান । ম্যানেজার আরো বলেন, “আমরা তোমাকে ট্রেনিং দিব যদি সফল হও, তখন তোমাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিব”। তিনি তিন সপ্তাহের ট্রেনিং নিয়ে সেখানে সফলতা লাভ করেন এবং অতঃপর তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান । তার কাজ ছিল কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে প্রায় তিন বছর কাজ করেন । ১৩৫ থেকে ১৫০ পাউন্ড পর্যন্ত বেতন পেতেন । ১৯৮১ সালের দিকে অ্যাশটনের পেনিমেডো এলাকায় একটি ইন্ডিয়ান টেইকওয়ে  ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি হজ পালন করেন এবং একই সালে তিনি হাইড বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন। হজব্রত পালন করার পর তিনি অ্যাস্টনের টেইকওয়ে বিক্রি করে লিভারপুল একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি ৭/৮ বছর লিভারপুলের ব্যবসাটি পরিচালনা করেন । অতঃপর তিনি লিভারপুলের ব্যবসাটি বিক্রি করে  ১৯৯০ সালে স্টকপোরটে তৃতীয় ব্যবসাটি করেন । ১৯৯৫ সালের দিকে ব্যবসাটি বিক্রি করে অবসর গ্রহণ করেন এবং কমিউনিটির কাজে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯৬ সালে হাইড বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এবং ১৯৯৭ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । অতঃপর তিনি বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং সুষ্ঠভাবে কমিউনিটি নেতৃত্ব দিয়ে যান । ২০০৪ সালে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৯৫ সালে হাইড শহরে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশী জনগণ বসবাস করত, যা ২০০৭ সালে এসে তা প্রায় ছয় হাজারের দাঁড়িয়েছে । তিনি বলেন ১৯৫ সালে হাইড বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কোন কার্যক্রম ছিল না । অফিসটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর উনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর কমিউনিটির সাথে নিয়ে অন্যান্য সংস্থা সাথে মিটিং এর আয়োজন করেন এবং পর্যায়ক্রমে বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করেন । তিনি প্বার্শবর্তী সকল বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কার্যক্রম অনুসরণ করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করেন । বিশেষ করে তিনি রচডেল, ম্যানচেস্টার অ ওল্ডহ্যাম বাংলাদেশী এসোসিয়েশনের সহযোগিতার কথা উল্লেখযোগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়াও তিনি টেমসাইড রেসিয়েল ইকুয়ালিটি কাউন্সিল, এইজ কনসারণ, শাহজালাল হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন, প্রবীণ মেলা লাঞ্চিয়ন ক্লাব এর ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও হাইড টেকনোলজি স্কুলের গভর্নর সহ বহু সামাজিক সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন । মোবাশ্বর উল্লাহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশী কমিউনিটির উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন এবং তাঁর অবদান হাইড বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । তিনি বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েকে প্রথমে শিক্ষা দিতে হবে, তাহলে আগামী দিনে এরা ভালো চাকুরি করবে এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে । তিনি আরো বলেন জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে বাংলাদেশ কমিউনিটির অনেক উন্নতি সাধিত হবে ।

মোবাশ্বর উল্লাহ বলেন, এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের সমস্যা নয়, এটা সব কমিউনিটির জন্য প্রযোজ্য । টেমসাইড নিউ চার্টার হাউজিং ওয়েটিং লিস্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে ঘরের জনা প্রায় দুই বছরের মত অপেক্ষা করতে হয় । বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বেশির ভাগ লোক নিজের ক্রয় করা বাড়িতে বসবাস করছেন, যার কারণে হাউজিং সমস্যা কম বলে তিনি মন্তব্য করেন । ‌হাইড কমিউনিটির সাথে কাজ করে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “কমিউনিটির সাথে কাজ করতে হলে ১০০ ভাগ সমর্থন পাওয়া সম্ভব নয়, কিছু লোক বিরোধিতা করবে, সমালোচনা করবে, এগুলো তোয়াক্কা না করে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাওয়া”। পিছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, মানবতার সেবা করার মধ্য দিয়ে আল্লাহর নিকট থেকে পুরস্কার পাওয়া যাবে ।

মোবাশ্বর উল্লাহ আরো বলেন, “কমিউনিটি একত্রে কাজ করলে যে কোন ইস্যুতে সফলতা লাভ করা যায় । ২০০০ সালে হাইড শহরে পুলিশ কর্তৃক যুবক নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণ করে পুলিশ চীফ ইন্সপেক্টর জন সমক্ষে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল ।

মোবাশ্বর উল্লাহ বলেন হাইড বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনে বয়ষ্ক লোকদের জন্য প্রবীণ মেলা লাঞ্চিয়ন ক্লাব একটি সফল প্রকল্প যা প্রায় ২০ বছর যাবত পরিচালিত হচ্ছে।

মোবাশ্বর উল্লাহ ৯ সন্তানের জনক, ৫ মেয়ে ও ৪ ছেলে, বড় ছেলে কাসেম উদ্দীন বারমিঙ্ঘাম ইউনিভারসিটি থেকে মাস্টার্স করে বর্তমানে দুবাইতে শিক্ষক হিসেব কর্মরত আছেন, দ্বিতীয় ছেলে আর এ সি তে কর্মরত আছেন ।

মোবাশ্বর উল্লাহ তার অতীত ও বর্তমান জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, উনি যদি বাংলাদেশে লেখাপড়া করে চাকুরই করার কোন নিশ্চয়তা ছিলনা । কিন্তু বিলেতে লেখাপড়া শেষ করে ভাল চাকুরী পাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে । আত্মীয়স্বজন দেশে রয়েছেন, নাড়ীর টানে তিনি নিয়মিত দেশে যাওয়া আসা করেন । জীবনের অবসর সময় তার পারিবারকে নিয়ে এ দেশেই কাঠাতে চান । (সমাপ্ত)

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *