জাতীয় সরকার গঠন করে দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন হবে কি ?


জাতীয় সরকার গঠন করে দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন হবে কিনা, তা একটি জটিল প্রশ্ন এবং এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি রয়েছে।
জাতীয় সরকার কী?
সাধারণত জাতীয় সরকার বলতে এমন একটি সরকারকে বোঝায় যেখানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে সংকটকালীন সময়ে, একসঙ্গে সরকার গঠন করে। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং সংকটের সম্মিলিত সমাধান খুঁজে বের করা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে এটি ভিন্ন হতে পারে, কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাধারণত নির্বাচনের আগে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গঠিত হয় যাতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হয়। জাতীয় সরকার দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্পমেয়াদী উভয়ই হতে পারে এবং এর উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে, যেমন রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা বড় কোনো জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।
জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাব্য সুবিধা:
* জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক বিভেদ কমানো এবং সকল দলের অংশগ্রহণে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানো। এটি রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস করতে পারে এবং দেশ পরিচালনায় স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
* বড় সংকট মোকাবিলা: যখন দেশে কোনো বড় ধরনের সংকট (যেমন: অর্থনৈতিক মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ) দেখা দেয়, তখন জাতীয় সরকার গঠন করে সম্মিলিতভাবে সেই সংকট মোকাবিলা করা সহজ হতে পারে।
* জনগণের আস্থা বৃদ্ধি: যখন রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে কাজ করে, তখন জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি আস্থা বাড়তে পারে, কারণ তারা মনে করতে পারে যে দেশের স্বার্থকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে।
* গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার: যদি দেশে কোনো গভীর কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন হয়, তাহলে জাতীয় সরকার এ ধরনের সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে, কারণ এতে ব্যাপক রাজনৈতিক সমর্থন থাকে।
জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ:
* সংবিধানগত বাধা: বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে জাতীয় সরকার গঠনের সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। যদি এ ধরনের সরকার গঠন করতে হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধন করতে হতে পারে, যা একটি জটিল প্রক্রিয়া।
* ক্ষমতা ভাগাভাগি ও সমন্বয়: বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে গঠিত হওয়ায় ক্ষমতা ভাগাভাগি এবং নীতি নির্ধারণে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। এটি সরকারের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে।
* জনগণের ম্যান্ডেট: একটি নির্বাচিত সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসে। জাতীয় সরকার যদি নির্বাচনের বাইরে গঠিত হয়, তাহলে তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
* নেতৃত্বের সংকট: বিভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে কে নেতৃত্ব দেবেন এবং কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
* দলীয় স্বার্থের প্রাধান্য: জাতীয় সরকার গঠিত হলেও দলগুলো তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বা স্বার্থকে ত্যাগ করতে না পারলে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।
* দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা: অনেক সময় জাতীয় সরকার স্বল্প সময়ের জন্য কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি টিকে থাকা কঠিন হতে পারে, কারণ দলীয় আদর্শ ও নীতির ভিন্নতা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
উপসংহার:
জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনই এর বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। এটি মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা, সমঝোতা এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সংকটের সমাধানে সত্যিই আগ্রহী হয় এবং নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে পারে, তাহলে জাতীয় সরকার একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। অন্যথায়, এটি নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।
আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন একটি সরকার গঠন করা সম্ভব?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *