বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধের জন্য সরকারের করণীয়: ডক্টর এম এ মোশতাক


বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধের জন্য সরকারের নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত:
১. ডিজিটালকরণ ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি:
* সম্পূর্ণ কাস্টমস ডিজিটালাইজেশন: প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা হলে যাত্রীদের পণ্য তল্লাশি, শুল্ক আদায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে হয়রানি কমে আসবে এবং স্বচ্ছতা বাড়বে।
* অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থা: একটি সহজে ব্যবহারযোগ্য অনলাইন অভিযোগ পোর্টাল চালু করা যেখানে যাত্রীরা দ্রুত হয়রানির অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং অভিযোগের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারবেন।
* সিসিটিভি নজরদারি বৃদ্ধি: বিমানবন্দরের প্রতিটি কোণায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা, যাতে যেকোনো অনিয়ম বা হয়রানি তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়।
২. জনবল ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতা:
* কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ: বিমানবন্দরে কর্মরত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিমান সংস্থা, নিরাপত্তা কর্মী, ক্লিনিং স্টাফ ইত্যাদি) জন্য যাত্রীসেবা, আচরণবিধি এবং প্রবাসীদের প্রতি আন্তরিকতা বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
* পোশাক ও পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা: সকল কর্মচারীর জন্য নির্দিষ্ট পোশাক ও স্পষ্ট পরিচয়পত্র পরিধান বাধ্যতামূলক করা, যাতে যাত্রীরা সহজেই তাদের চিনতে পারেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) নতুন পোশাক নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ইতিবাচক।
* জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: যাত্রী হয়রানির কোনো অভিযোগ উঠলে দ্রুত তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রভাব বা সুপারিশকে প্রশ্রয় না দেওয়া।
* ভিজিলেন্স টিম গঠন: কর্মীরা সঠিক পোশাক পরিধান করছেন কিনা বা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, তা তদারকির জন্য ভিজিলেন্স টিম গঠন করা।
৩. সুযোগ-সুবিধা ও প্রক্রিয়া সহজীকরণ:
* তথ্য কেন্দ্র ও হেল্পডেস্ক: যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য কেন্দ্র এবং হেল্পডেস্ক স্থাপন করা, যেখানে তারা যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তা পেতে পারেন।
* শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রচার: প্রবাসীরা কী কী পণ্য শুল্কমুক্ত আনতে পারবেন, সে বিষয়ে বিমানবন্দরে স্পষ্টভাবে তথ্য প্রদর্শন করা এবং তাদের সচেতন করা, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত শুল্ক দাবিতে হয়রানি না হন।
* প্রবাসীদের প্রতি সংবেদনশীলতা: প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল ও আন্তরিক হওয়ার জন্য সকল বিমানবন্দর কর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন।
* লাগেজ ব্যবস্থাপনা উন্নত করা: লাগেজ হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া দ্রুত ও ত্রুটিমুক্ত করা। বিলম্বে আসা লাগেজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার মতো ‘হোম সার্ভিস’ চালু করার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানানো উচিত এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
* ৯৯৯ হেল্পলাইন ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট: বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে জরুরি সেবার জাতীয় হেল্পডেস্ক নম্বর ৯৯৯ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা এবং তাৎক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের কার্যক্রম জোরদার করা, যাতে যেকোনো সমস্যায় দ্রুত আইনগত সহায়তা পাওয়া যায়।
৪. পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন:
* নিয়মিত নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন: যাত্রীসেবার মান এবং হয়রানির ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য নিয়মিত নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা।
* যাত্রী মতামত গ্রহণ: যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়মিত মতামত গ্রহণ (ফিডব্যাক ফর্ম, অনলাইন সার্ভে) এবং সেই মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ করা।
* অপ্রত্যাশিত পরিদর্শন (Surprise Visits): ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা বিমানবন্দরে অপ্রত্যাশিত পরিদর্শন (Surprise Visits) করা, যাতে কর্মীরা সর্বদা সতর্ক থাকেন এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা গেলে বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি অনেকাংশে কমে আসবে এবং যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *