এই গল্প শুধু একটি জীবনের নয়—এটি হাজারো তরুণের জন্য এক অবিনাশী অনুপ্রেরণা।আমরা অনেকেই জানি প্রাক্তন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের জীবনের গল্প—একজন কৃষকের ঘরে জন্ম নিয়ে কীভাবে তিনি দেশের একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হন। তাঁর গল্পটি যেমন প্রেরণাদায়ক, তেমনি হৃদয়ছোঁয়া।
কিন্তু আমরা ক’জন জানি মোঃ আলী আকবর ফরাজীর সংগ্রামের কথা? তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হবার যোগ্য একজন কর্মকর্তা, কিন্তু রাজনৈতিক পক্ষপাত ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি সে পদে যেতে পারেননি।

পটুয়াখালীর এক ছোট গ্রামে জন্ম নেওয়া আলী আকবর ফরাজীর শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন জেলে, নদীতে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতেন। ছোটবেলা থেকেই ফরাজী বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে যেতেন, বাজারে বসে মাছ বিক্রি করতেন—পরিবারের সবার মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে এটিই ছিল তাঁর বাস্তবতা।
একদিন, মাত্র ছয় বছর বয়সে, ফরাজী রাস্তার ধারে একটি বিশ টাকার নোট কুড়িয়ে পান। অনেকে তাঁকে বলেছিল, রেখে দিতে—এই টাকায় ভালো কিছু খেতে পারবে। কিন্তু ফরাজী সেটা করেননি। তিনি খুঁজে খুঁজে প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করেন এবং টাকা ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনার পর থেকেই গ্রামের মানুষ তাঁকে ডাকতে শুরু করে “সৎ মিয়া” নামে।
শিক্ষার প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভালোবাসা। দিনের বেলা কাজ করে রাতে পড়াশোনা করতেন। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং MBA ও MSS ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোটার মাধ্যমে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ৩১ বছরের চাকরি জীবনে তিনি ছিলেন সততা, পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার প্রতিচ্ছবি।
ব্যাংকিং খাতের অনেকেই বিশ্বাস করেন, আজকের বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য জনাব ফরাজীর মতো পেশাদার, সৎ ও নিবেদিত কর্মীই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সততা, নিষ্ঠা ও গভীর পেশাগত জ্ঞানসম্পন্ন এই মানুষটিকে তাঁর সহকর্মীরা প্রায়শই “বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে অন্যতম সৎ কর্মকর্তা” বলে অভিহিত করেন।
যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্নৈতিক মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তখন ব্যাংকিং মহলে এমন বহু কণ্ঠস্বর জোরালো হচ্ছে যারা বলছেন—ফরাজীর মতো মানুষদের পুনঃনিয়োগ কিংবা যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হোক, যারা প্রকৃত অর্থে স্বচ্ছতা, পেশাদারিত্ব এবং জনসেবার প্রতীক।
