দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশই তরুণ, এবং এই তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারলে তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।কেন যুব সমাজের কর্মসংস্থান বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
* জনসংখ্যার লভ্যাংশ (Demographic Dividend): বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যার চেয়ে বেশি। এই সুবিধা কাজে লাগাতে হলে যুবকদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা জরুরি।
* অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: শিক্ষিত ও দক্ষ তরুণরা যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, তখন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা সরাসরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
* দারিদ্র্য হ্রাস: কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেলে মানুষের আয় বাড়ে এবং দারিদ্র্যের হার কমে আসে।
* সামাজিক স্থিতিশীলতা: বেকারত্ব সমাজে হতাশা, অপরাধ প্রবণতা এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে। কর্মসংস্থান যুবকদের সুনির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
* 创新 ও উদ্যোক্তা তৈরি: তরুণদের মধ্যে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনী শক্তি থাকে। কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অনুকূল পরিবেশ পেলে তারা নতুন নতুন উদ্যোগ তৈরি করতে পারে, যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তোলে।

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধানঃ
বাংলাদেশে যুব বেকারত্ব এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত যুব বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ১১.৪৬%। কিছু মূল চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিচে দেওয়া হলো:
* শিক্ষাব্যবস্থা ও দক্ষতার অভাব: বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
* সমাধান: বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতি এবং সফট স্কিল (যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা) বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
* কর্মসংস্থান সৃষ্টির অপর্যাপ্ত সুযোগ: ক্রমবর্ধমান যুব জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।
* সমাধান: সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, এবং নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করা।
* উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতিবন্ধকতা: পুঁজির অভাব, প্রশিক্ষণ ও নীতিগত সহায়তা না থাকা অনেক তরুণকে উদ্যোক্তা হতে নিরুৎসাহিত করে।
* সমাধান: যুব উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, ব্যবসা শুরু ও পরিচালনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (Department of Youth Development – DYD) প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে।
* তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার: ডিজিটাল দক্ষতা ও ফ্রিল্যান্সিং এর অপার সম্ভাবনা রয়েছে, যা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
* সমাধান: গ্রামীণ ও শহুরে যুবকদের জন্য আইসিটি এবং ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করা। সরকার বর্তমানে ৪৮টি জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ শুরু করেছে।
* নীতি ও বাস্তবায়নের অভাব: যুব নীতি এবং কর্মসংস্থান বিষয়ক নীতিমালা থাকলেও সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে।
* সমাধান: জাতীয় যুব নীতি ২০১৭-এর মতো নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা।

সরকারি উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে:
* যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর: যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে থাকে। তারা প্রায় ৮৩টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
* জাতীয় যুব নীতি ২০১৭: এই নীতিতে যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
* বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি: Skills for Employment Investment Program (SEIP) এর মতো প্রকল্পগুলো যুবকদেরকে বিভিন্ন শিল্পে কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ করে তুলছে।
* ঋণ সুবিধা বৃদ্ধি: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রশিক্ষিত যুবকদের জন্য ঋণের সীমা ২ লাখ টাকা এবং সফল উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে যদি সঠিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়, তাহলে তারা দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সফল হতে পারে।
আপনি কি মনে করেন, কোন নির্দিষ্ট খাতের উপর জোর দিলে বাংলাদেশে যুব কর্মসংস্থান দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে?
