জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা উচিত – ডক্টর এম এ মোশতাক


বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্য (এমপি) বা মেয়র প্রার্থীর জন্য আইনগতভাবে কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ২৫ বছর বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্য, যদি না তিনি নির্দিষ্ট কিছু অযোগ্যতার আওতায় পড়েন (যেমন: উন্মাদ, দেউলিয়া, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী, ২ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত)। মেয়র পদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের যোগ্যতা প্রযোজ্য – ২৫ বছর বয়স এবং ভোটার তালিকায় নাম থাকা।
তবে, আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও, একজন এমপি বা মেয়র প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে জনমনে এবং বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শিক্ষাগত যোগ্যতা সরাসরি নেতৃত্ব বা জনসেবার সাথে সম্পর্কিত না হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব রয়েছে:
* বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ: উচ্চতর শিক্ষা একজন প্রার্থীকে জটিল সমস্যা বিশ্লেষণ করতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ বা নগর পরিকল্পনা মতো বিষয়গুলো বোঝার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্তরের বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা প্রয়োজন।
* যোগাযোগ দক্ষতা: শিক্ষিত প্রার্থীরা তাদের ভোটারদের সাথে, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আরও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারেন।
* আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা: বর্তমান বিশ্বে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকলে একজন জনপ্রতিনিধি তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন।
* বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি: অনেক ভোটার শিক্ষিত প্রার্থীকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন এবং তাদের নির্বাচিত করতে পছন্দ করেন।
শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা কি যথেষ্ট?
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা একজন ভালো জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আরও কিছু গুণাবলী থাকা জরুরি:
* অভিজ্ঞতা: বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে জনসেবা বা সমাজসেবার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় যাদের উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে, তারা জনগণের সমস্যাগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
* নৈতিকতা ও সততা: একজন জনপ্রতিনিধির জন্য নৈতিকতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ। শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন, সৎ এবং নীতিবান না হলে তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন না।
* জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা: জনগণের সমস্যাগুলো শোনা, তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
* দূরদৃষ্টি: ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করার মতো দূরদৃষ্টি থাকা উচিত।
* নেতৃত্বের গুণাবলী: নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, মানুষকে একত্রিত করার ক্ষমতা এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা থাকা জরুরি।
উপসংহার
যদিও বাংলাদেশের আইনে এমপি বা মেয়র প্রার্থীর জন্য কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, তবে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য একজন যোগ্য ও দক্ষ জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে, শিক্ষাগত যোগ্যতা একটি ইতিবাচক দিক হতে পারে, তবে এটিই একমাত্র মাপকাঠি হওয়া উচিত নয়। প্রার্থীর সততা, নৈতিকতা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলীর মতো বিষয়গুলোকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আপনি কি মনে করেন যে, বাংলাদেশের আইনে জনপ্রতিনিধিদের জন্য একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা উচিত?
May be an image of 2 people, television, lighting and text

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *