অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেশ পরিচালনার জন্য অপরিহার্য – ডক্টর এম এ মোশতাক


অবকাঠামোগত উন্নয়ন কি বাংলাদেশের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অপরিহার্য?
হ্যাঁ, বাংলাদেশের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। অবকাঠামো একটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড এবং সামগ্রিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি। এর অভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়, জীবনযাত্রার মান হ্রাস পায় এবং দেশের সামগ্রিক কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের গুরুত্ব:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তা কয়েকটি বিষয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:
* অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ: উন্নত সড়ক, সেতু, বন্দর এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করে। এটি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে, যা ঐ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
* যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: আধুনিক ও সুসংগঠিত যোগাযোগ ব্যবস্থা পণ্য পরিবহন, মানুষের চলাচল এবং তথ্য আদান-প্রদানকে সহজ করে তোলে। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটায় এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শহুরে অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করে।
* শিল্পায়ন ও নগরায়ন: বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো মৌলিক অবকাঠামো শিল্প স্থাপন এবং নগর উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এটি শিল্পায়নকে উৎসাহিত করে এবং শহরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।
* শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশাধিকার: উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সহজে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এটি মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
* দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি: অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। দীর্ঘমেয়াদে, উন্নত অবকাঠামো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হয়।
* দুর্যোগ মোকাবিলা ও স্থিতিশীলতা: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থার মতো অবকাঠামো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
* পর্যটন শিল্পের বিকাশ: উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা এবং আধুনিক হোটেল-মোটেলে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পর্যটন শিল্পের প্রসারে সহায়তা করে, যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে, যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। তবে, এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, যেমন:
* অর্থায়ন: বড় আকারের অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়।
* ভূমি অধিগ্রহণ: ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায়শই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
* দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা: কিছু প্রকল্পে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দেখা যায়, যা প্রকল্পের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
* পরিকল্পনাহীনতা: দীর্ঘমেয়াদী এবং সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব অনেক সময় প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে।
উপসংহার:
সুষম ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও অপরিহার্য। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে আরও সুন্দরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।

One response to “অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেশ পরিচালনার জন্য অপরিহার্য – ডক্টর এম এ মোশতাক”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *