দুর্নীতিবাজ লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি: – ডক্টর এম এ মোশতাক


দুর্নীতিবাজ লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের জন্য কাজ করে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তার একটি বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:
আইনি ব্যবস্থা:
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা হলো আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
* অনুসন্ধান ও তদন্ত: দুদক দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তা অনুসন্ধান ও তদন্ত করে। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে এর ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়।
* মামলা দায়ের ও পরিচালনা: দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দুদক সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করে এবং এর বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। দুর্নীতির মামলাগুলো সাধারণত স্পেশাল জজ আদালতে বিচার করা হয়।
* সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ: দুর্নীতি করে অর্জিত সকল অবৈধ সম্পদ (যেমন: অর্থ, জমি, বাড়ি, গাড়ি) বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। এই সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়।
* কারাদণ্ড ও জরিমানা: দুর্নীতি দমন আইনে বিভিন্ন অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদের কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান আছে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী শাস্তির মাত্রা ভিন্ন হয়।
* চাকরি থেকে বরখাস্ত: সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যেতে পারে।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা:
আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
* নৈতিকতা ও আচরণবিধি চালু করা: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কঠোর নৈতিকতা ও আচরণবিধি চালু করা এবং এর নিয়মিত তদারকি করা।
* স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: সকল প্রকার লেনদেন, নিয়োগ, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার (যেমন: ই-জিপি) এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
* নীতি ও পদ্ধতির সংস্কার: দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে এমন দুর্বল নীতি, বিধি ও পদ্ধতির সংস্কার ও উন্নয়ন করা।
* অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার: প্রতিষ্ঠানের ভেতরে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাতে দুর্নীতির সুযোগ কমে আসে।
* জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধি: দুর্নীতি দমনের সাথে জড়িত সংস্থাগুলোর (যেমন: দুদক) জনবলের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো, বিশেষ করে সাইবার ক্রাইম এবং অর্থ পাচার সংক্রান্ত তদন্তে।
প্রতিরোধমূলক ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা:
দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে হলে শুধু শাস্তি নয়, দুর্নীতি প্রতিরোধেও নজর দিতে হবে:
* গণসচেতনতা বৃদ্ধি: দুর্নীতি যে একটি সামাজিক ব্যাধি এবং এর কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে সেমিনার, কর্মশালা, এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে।
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা: পাঠ্যবইয়ে দুর্নীতিবিরোধী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও সততার শিক্ষা দেওয়া।
* সততা সংঘ গঠন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে সততা সংঘ গঠন করে তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা।
* তথ্য প্রদানকারীর সুরক্ষা: দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী (হুইসেলব্লোয়ার) ব্যক্তিদের পরিচয় গোপন রাখা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এতে নির্ভয়ে মানুষ অভিযোগ জানাতে উৎসাহিত হবে।
* জনসাধারণের অংশগ্রহণ: স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত করা এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
অনেক সময় দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার হয়। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
* অর্থ পাচার রোধে চুক্তি: বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থ পাচার রোধে চুক্তি করা এবং তথ্য আদান-প্রদান করে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করা।
* আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে চলা: জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনসহ (UNCAC) অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রটোকল মেনে চলা।
দুর্নীতি একটি ক্যান্সারের মতো, যা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।
May be an image of 3 people and text

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *