আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল জাঁকজমক জৌলুসময় দুই দিনের সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের মহামিলনের উৎসব শেষ পর্যন্ত কমিটি ঘোষণায়, পুরনো অযোগ্য একদল ব্যর্থ নেতৃত্বের সঙ্গে বিতর্কে যুক্ত করার অভিষেকে হতাশ করেছে। দুর্নীতি মামলার আসামি আবদুল মান্নান খানের সঙ্গে প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই হলো সময়ের বিতর্কিত নাম শাজাহান খান।
দলের নেতা-কর্মীদেরই হতাশ করেনি, হতাশ করেছে দেশের রাজনৈতিক সচেতন মহলকেও। এই জাতির স্বাধীন জাতিসত্তা ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের আবেগ অনুভূতির সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীর রক্ত ঘাম শ্রম ও ঐতিহাসিক অবদানের আত্মত্যাগের মহিমায় এই দলটির ইতিহাস লেখা হয়ে আছে।
আওয়ামী লীগ নামের উপমহাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের এই সম্মেলনের আয়োজন যত চাকচিক্যময় হোক না কেন অতীতের আবেগ অনুভূতির ছন্দপতনই ঘটেনি, কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে হাইব্রিড, সুবিধাবাদী ও ক্ষমতার করুণাশ্রিতদের ভারে দলের চারদিকের নব্যদের উপস্থিতিতে আয়তনে বাড়লেও বটবৃক্ষের মতো দাঁড়ানো দলটি আজ রক্তশূন্যতায় ভুগছে।
দলে নেতৃত্বের সংকট প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয়েছে। জনগণ, সংগঠন ও কর্মী বিচ্ছিন্ন একদল নেতা ব্যর্থতার মুকুট পরে বহাল থাকলেও দলটি নতুনের জয়গান যেমন গাইতে পারেনি। তেমনি নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যের চেহারায় আবির্ভূত হতে পারেনি। দলের মধ্যে কর্মী ও জনগণ বিচ্ছিন্ন আমদানি নেতাদের আসন আরও পাকাপোক্ত হিসেবে উন্মুক্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগারদের ঠাঁই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কাঠামোতে না হলেও দেউলিয়া বামপন্থিদের সঙ্গে বিতর্কিত মুজিব সরকার উৎখাতকারী গণবাহিনীর নেতাদের অভিষেকের সম্মেলনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগে বাতিল আমদানি নেতৃত্বের যতটা কদর ঠিক ততটাই অবহেলা ঘটেছে রাজনীতির জন্ম থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত নেতা-কর্মীদের।
এমন কমিটি ঘোষণার সম্মেলন এত ব্যয়বহুল না করে বাজেটের টাকা শীতার্তদের দেওয়া যেত। কুষ্টিয়া থেকে আশা শতবর্ষী আওয়ামী লীগার ইসহাক মাস্টারের উপস্থিতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চেয়ে বড় আকর্ষণের ছিল। উনার খবর কেউ রাখেনি, তাই মঞ্চে আনা হয়নি। আনলে শোভা বাড়ত। অনুভূতির করতালিতে ভাসত সম্মেলন। টানা ১১ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এক সময়ের গরিবের দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, অনেক সহৃদয় অনুদান দাতা পেয়েছেন, তাই এমন জাঁকজমক স্বাভাবিক।
কিন্তু অতীতের সব তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করতে কি পারছেন, গোটা দেশ আজ নৌকায় উঠলেও আবেগহীন কতটা? কতটা উচ্ছ্বাসহীন? কতটা করতালি ও স্লোগানহীনতা? বিরোধী দলে গেলে এর বড় অংশই নৌকা থেকে নেমে যাবেন। অতীতে বারবার প্রমাণ হয়েছে। যারা থাকবেন তারাই দলের শক্তি, আবেগ-অনুভূতি!
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হককে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক করে দলটির জন্ম লগ্নের অন্যতম কারাবন্দী প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানই দলটির কা-ারি হয়েছিলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের পারিবারিক জীবনের বিষাদগ্রস্ত ঘটনা তার ব্যক্তিজীবনকে চলচ্চিত্রের বিয়োগান্তক পরিণতি যেমন ডেকে এনেছিল তেমনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বামপন্থিদের ইন্ধনে দল ভেঙে ন্যাপ গঠন করে সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটা দিয়েছিলেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের কঠোর দুঃশাসনের মুখে তুমুল রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়ায় দলের হাল ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন মৃত্যুর বাজির লড়াইয়ে ১৩টি বছর কারা নির্যাতন ও ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে আপসহীন থেকে এই দলকে জনপ্রিয় করে তার নেতৃত্বে একটি ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।
সেই সময় হোটেল ইডেন থেকে সব সম্মেলনে যেমন অর্থবিত্ত ও জৌলুসের চাকচিক্য না থাকলেও কিন্তু নেতৃত্বের সমাহার, রাজনৈতিক লক্ষ্য আর তার সঙ্গে কর্মী সমর্থক ও জনগণকে একাত্ম করে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য মনোবলের সঙ্গে ছিল গভীর আবেগ অনুভূতি। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার সংগ্রাম ও ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান তাকে ও আওয়ামী লীগকে গণমুখী গগনচুম্বী জনপ্রিয় অবিসংবাদিত নেতা ও দলে পরিণত করেছিল।
৭০’র গণরায় মানুষ প্রার্থী দেখে দেয়নি, জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৌকা প্রতীকে দিয়েছিল। ব্যালট বিপ্লবে ঐতিহাসিক রায় জাতির বিশ্বস্ত নেতা বঙ্গবন্ধু পবিত্র আমানত হিসেবে রক্ষাই করেননি মহান স্বাধীনতার ডাক দিয়ে জাতিকে এক মোহনায় মিলিত করে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সংগ্রামের পথে পথে জাতীয় বীর থেকে, জননায়ক থেকে রাজনীতির মাঠে অসংখ্য নেতা-কর্মী সংগঠক তৈরি করেছিলেন। ৭১-এ বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগারে বন্দী রেখে ফাঁসির রায় দিয়ে কবর খোঁড়া হলেও তিনি যেমন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন তেমনি তাঁর তৈরি নেতা-কর্মী সংগঠকরা রণাঙ্গনে গভীর দেশপ্রেম ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের অগ্নি পরীক্ষায় বীরত্বের মুকুট অর্জন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির চার জাতীয় নেতাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। সেই চার নেতার অন্যতম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তখন দলের বা সরকারের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হিসেবে জীবন দিয়েছিলেন। মহান হৃদয়ের নেতার কাছে থাকা খন্দকার মোশতাক হয়েছিল মীরজাফর। বিশ্বাসঘাতক খুনিদের নেতা।
হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখলকারী খুনিরা হত্যা নির্যাতন চালিয়েছিল। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদকে খুনিরা ধরে নিয়ে যে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আধমরা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের বীরদের জন্য সেটি ছিল চরম অসম্মান ও কলঙ্কের। জীবিত নেতাদের মধ্যে বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুও দীর্ঘ কারা নির্যাতন ভোগ করেছিলেন।
৭১’র বাঘা সিদ্দিকী খ্যাত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের নেতৃত্বে মহান মুজিবের আদর্শের সন্তানরা টগবগে রক্ত নিয়ে আরেক দফা প্রতিরোধ যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ১৫ বছর নির্বাসিত জীবনে পিতার রক্তের প্রতিশোধ নিতে না পারার বেদনায় মাংস খাওয়া ছেড়ে দেওয়া কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেলেন না, দলের দায়িত্বশীল পদ পেলেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে ষড়যন্ত্রের খলনায়করা এতটাই দূরত্ব তৈরি করলেন বুক ভরা অভিমান নিয়ে বোনের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে তাকে ঘর ছাড়তে হলো!
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির দুঃসময়ের সাহসী বীর মোস্তফা মহসিন মন্টুরা আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি, এটি দলের জন্যই বেদনার। ব্যারিস্টার আমির উল ইসলামের মতো মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা এই দলের দুঃসময়ে পাশে থাকলেও সুসময়ে কোথাও নেই! অন্য দল থেকে আসা সুবিধাবাদীরা অযোগ্যতা নিয়ে স্থান পায় অথচ নিবেদিত যোগ্যরা জায়গা পায় না। তোফায়েল আহমেদের পর ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে ডাকসু ভিপি হওয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের এই দলে জায়গা হলো না।
জায়গা হলো বঙ্গবন্ধু সরকার উৎখাতকারী গণবাহিনীর সেদিনের সশস্ত্র নেতা ও ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ত্রাস, একালের নিরাপদ সড়কের ইস্যুতে গণবিরোধী চরিত্রে আবির্ভূত শাজাহান খানের। মন্ত্রিত্বও করলেন, পরিবহন নেতাও থাকলেন এবার একেবারে প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পেলেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগার হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিত কর্মী বান্ধব গণমুখী নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদের প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই হলো না।
৬৯’র নায়ক বঙ্গবন্ধুর আদরের ধন আওয়ামী লীগের সম্পদ তোফায়েল সব সরকারের আমলে জেল খেটে, নির্যাতন সহ্য করে হলেন দলে অবহেলিত! আর বামপন্থি রাজনীতিতেও ঠাঁই না পাওয়া দেউলিয়া নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রেসিডিয়ামে থাকলেন বহাল। নাহিদ দুবার মন্ত্রী ছিলেন। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গণফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন।
বিগত কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে সিলেট বিভাগ দূরে থাক, জেলা দূরে থাক নিজের নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদের কাছেও প্রিয় হতে পারেননি। এ কীসের আলামত? ৭১’এ ভাই হারা, ৭৫’র পর আটক হয়ে খুনিদের হাতে শারীরিক নির্যাতন ও জেলখাটা মুকুল বোসের ঠাঁই হয় উপদেষ্টাম-লীতে।
বামপন্থি রাজনীতিতে ঠাঁই না হওয়া, ছাত্র ইউনিয়নের সব চেয়ে ব্যর্থ নেতা, নিজের নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যাখ্যাত, দল ও কর্মী বিচ্ছিন্ন আবদুল মান্নান খান প্রেসিডিয়ামে বহাল থাকেন! জাতীয় রাজনীতি দূরে থাক আওয়ামী লীগের আবেগ অনুভূতির সঙ্গে, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আত্মার বন্ধন নাই থাক তবুও কাজী জাফর উল্লাহ বিগত দুটি নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর কাছে করুণ পরাজয়বরণ করে প্রেসিডিয়ামে বহাল তবিয়তে আবার এসেছেন। মরণকালেও মোজাফফর হোসেন পল্টুর জায়গা হয় না! সাবেক ডাকসু ভিপি আখতারউজ্জমানের কামড় খেয়ে দলে পড়ে থাকার অর্জন নেই! তার যোগ্যতাই কি অযোগ্যতা? এমন কত উদাহরণ দেওয়া যাবে।
বিগত সময়ে কমিটিতে সাংগঠনিক পদে থেকে একটি বিভাগের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে, নানা কমিটি ও তদবির বাণিজ্য করে যারা অর্থ সম্পদ গড়ে বিতর্কিত হয়েছেন তাদের কেউ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বহাল আবার কেউ পদোন্নতি পেয়ে প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পেলেও শহীদ পুত্র রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পান না!
সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিশ্রমী সফল ক্লিন ইমেজ নিয়ে যে তিনজন কর্মীবান্ধব গণমুখী চরিত্রের পরিচয় দিয়েছেন তাদের অন্যতম ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল বাদ পড়লেন! অনেকে বলেন, সরকার ও দল আলাদা হচ্ছে। এদের মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি হবে। যদি তাই হয় তাহলে শিক্ষামন্ত্রী স¦পদে বহাল থাকেন কী করে? তথ্যমন্ত্রীর এত বড় প্রমোশন হয় কী করে? এদের হলে ওদের কেন দলে হবে না? হিসেব মেলে না।
জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের পদোন্নতি ছয়বারের এমপি মির্জা আজম, সাবেক ছাত্র নেতা কামাল হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় কর্মীরা খুশি। মেহের আফরোজ চুমকীর এই দায়িত্ব লাভও ইতিবাচক প্রশংসিত। দফতর সম্পাদক পদে ভদ্র বিনয়ী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়ার পদোন্নতি তার দক্ষতার পুরস্কার। কিন্তু দুঃসময়ের মৃণালকান্তি দাস এখনো সম্পাদকম-লীতেই পড়ে থাকলেন। তার দক্ষতা মাঠের রিপোর্টার থাকতেই দেখেছি। চট্টগ্রামের খোরশেদ আলম সুজনরা জায়গা পাননি।
এক সময় ছিল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় রাজনীতিতে সিলেটের দাপুটে নেতাদের জায়গা। এবারের কমিটি দেখে বোঝা যায়, নেতৃত্বের সংকট কতটা প্রবল। নেতা তৈরি করতে পারেনি দল। মুজিবকন্যা যাদের সুযোগ দিয়েছিলেন তারা ব্যর্থ। ’৯০-এর ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা তৃণমূলে নিবিড় সম্পর্ক থাকা, জাতীয়ভাবে পরিচিত শফি আহমেদের এবার জায়গা হবে কি কমিটিতে!
’৭৫ পরবর্তী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ক্লিন ইমেজের নেতাদের কি জায়গা হবে বাকি পদগুলোতে? বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ায় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে। তারপর আবদুর রাজ্জাককে মধ্যমণি করে দাঁড়ায় আদর্শিক দল। আলো ছড়ান তোফায়েল আহমেদ। কত বাঘা বাঘা জাতীয় নেতা!
তবু সুসংগঠিত দল নেতৃত্বের লড়াইয়ে ভাঙনের মুখে পড়লে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সভাপতি হয়ে এলেন। তারপর ইতিহাস। আন্দোলন-সংগ্রাম-ঐক্যের। গণজাগরণের। বিজয়ের ৩৯ বছরের নেতৃত্ব পৃথিবীতে বিরল। চারবার প্রধানমন্ত্রী হলেন। দল টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। তিনি যত ছাড়তে বলেন, তার বিকল্প তিনিই। দল তাকে ছাড়ার কথাই ভাবেনি। তাকেই সভাপতি হতে হবে সবাই জানতেন।
তাই হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে কারাগার, রাজপথ, ক্ষমতা, ওবায়দুল কাদের নিরন্তর পথচলা নেতা ও দলের অনুগত। আবার সাধারণ সম্পাদক হবেন, এটা সবাই জানতেন। এটাও স্বাভাবিক ঘটনা। তার বিকল্পও ছিল না সারা দেশের কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়।
বঙ্গবন্ধুর উক্তি তুলে ধরে দলের সভানেত্রী সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন নেতৃত্ব তৈরি হয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম থেকে সম্পাদকম লীতে অনেকের পুনর্বহাল ঘটেছে যাদের আওয়ামী লীগের সংগ্রামে বর্ণাঢ্য অতীত নেই। ক্ষমতার বাইরে গেলে এই ওয়ার্কিং কমিটির নেতারা কি আদৌ দলে মাঠকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতির লড়াইয়ে নেতৃত্বের ক্যারিশমায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভূমিকা রাখতে পারবেন?
আওয়ামী লীগে কে আশীর্বাদ আর কে অভিশাপ ক্ষমতা ও বিরোধী দলের ভূমিকাই বলে দেয়। অনেকে রাজপথ থেকে লড়ে যেমন আনুগত্যের পুরস্কার পেয়েছেন তেমনি অনেকে কোন যোগ্যতায় প্রেসিডিয়ামসহ নানা জায়গায় পদোন্নতিতেও বহাল? এ প্রশ্ন থেকে যায়। শেখ হাসিনার শক্তিতে আজ ক্ষমতায়। কাল বিরোধী দলে গেলে পারবেন এমন সম্মেলন? রুখে দাঁড়াতে শাসকের নির্যাতন?