বিশাল পর্দার সামনেও মানুষের ঠাঁই হচ্ছিল না। এর মধ্যেও অনেক নারী জায়গা করে নিয়ে খেলা দেখছিলেন বড় পর্দায়। খেলা শেষে আর্জেন্টিনার জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়লেন সবাই।

ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনা খেলা শুরুর অনেক আগেই ছড়িয়ে পড়ে। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে এর প্রকাশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো অফিসে সাধারণত বাইরের শব্দ ঢোকে না। কিন্তু রাত আটটা বাজার আগেই ভুভুজেলা ও সাউন্ড বক্সের শব্দ অফিসের ভেতর থেকে পাওয়া যাচ্ছিল। অফিসের নিচে নামতে বোঝা গেল, কাঁচাবাজারের ওখান থেকে সাউন্ড বক্সের শব্দ আসছে। গিয়ে দেখা গেল, ছোট একটি টিভি চলছে, সঙ্গে বড়  তিনটি সাউন্ড বক্স বাজছে। আর অনেক মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে।

বসুন্ধরা শপিংমলের সামনে গিয়ে দেখা গেল, শত শত মানুষ খেলা শুরুর আগেই ভিড় করেছেন। তখনই ভুভুজেলা, পটকা ও মানুষের চিৎকারে কান পাতা দায় হয়ে পড়ে। আর দুই পাশেই একটা করে লাইন ছাড়া যানবাহনের চলাচল মানুষের ভিড়ে প্রায় বন্ধ।

কেবল পুরুষেরাই নয়, বড় পর্দায় খেলা দেখতে বসুন্ধরা শপিংমলের সামনে হাজির হন অনেক নারীও। তাঁদের মধ্যে অনেকে বান্ধবীরা মিলে এসেছেন, কেউ স্বামীর সঙ্গে, কেউবা অন্য প্রিয়জনের সঙ্গে। নারীরা সংখ্যায়ও ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

রাত ৯টায় খেলা শুরু হতেই চিৎকার। আর মেসি বল পেলে তো ‘মেসি মেসি’ রব ওঠে। গোলের সুযোগ মিস করলেই ভুয়া ভুয়া রবও উঠছিল। আবার এমবাপ্পের হাতে বল গেলেও চিৎকার শুরু হয়ে যায়।

আর্জেন্টিনা সমর্থকদের সঙ্গে ফ্রান্সের সমর্থক ও আর্জেন্টিনার সমর্থক নন—এমন খেলাপ্রেমীদের চলছিল তর্কযুদ্ধ। শুরুর দিকে মেসির পায়ে বল যেতেই একজন বলেন, ‘মেসি ভাই, মারো…।’ পাশের আরেকজন বলেন, ‘চিল্লাইলে লাভ নাই। একটু পরেই গোল খাবে।’

আর্জেন্টিনার একজন খেলোয়াড় ‘ফাউল’ করতেই এক দর্শক বলে ওঠেন, ‘মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনার কেউ ভালোভাবে খেলে না।’ আরেকজন বলেন, ‘আর্জেন্টিনা সবচেয়ে ভদ্র দল।’ চলতে থাকে এমন নানান কথা।

দ্বিতীয়ার্ধে যখন ফ্রান্স প্রথম গোল দেয়, তখন দর্শকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস কিছুটা কমে আসে। এমবাপ্পে দ্বিতীয় গোল দিলে ভুয়া ভুয়া রব ওঠে।

দুই গোল খাওয়ার পর আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড় একটু মিস করলেই গালিগালাজ করছিলেন আর্জেন্টিনা সমর্থক মনোয়ার হোসেন। খেলা শুরুর পর থেকেই ভীষণ রকম উত্তেজিত ছিলেন ফার্মগেটের গ্রিন সুপার মার্কেটের মালামাল টানা এই ভ্যানচালক। তাঁরা প্রায় ৫০ জন মিলে খেলা দেখতে এসেছেন। প্রথমার্ধের খেলা শেষে মনোয়ার বলছিলেন, ‘অর্ধেক সময়ে দুইটা গোল দিছি, তারপর আরও ২টা গোল দেব।’ অবশ্য পরের অর্ধেক সময়ে আর্জেন্টিনা ২ গোল হজম করার পর বেশির ভাগ সময় মন খারাপ করে কাটান তিনি।

পেনাল্টি শেষে আর্জেন্টিনা জিতলে সজীব নামের এক ফ্রান্স–সমর্থক বলেন, ‘বুকের ব্যথা বুকে, এটা বলে লাভ নাই।’

ব্রাজিল সমর্থক শারমিন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেসির শেষ বিশ্বকাপ, ও পেয়েছে ভালোই হলো।’ শামীম নামে এক আর্জেন্টিনা সমর্থক বলেন, ‘ফ্যান্টাস্টিক। এটা মেসি ডিজার্ভ করে। শেষ পর্যন্ত অসাধারণ হয়েছে।’

খেলা শেষে ‘মেসি মেসি মেসি’—স্লোগান তুলে মিছিল করতে করতে ঘরে ফেরেন আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here