গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আপডেট প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কভিড-১৯ মহামারি থেকে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু মহামারি পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমাগত ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক দুই বছরের আপডেটে বলেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আবার বেড়ে ৫ দশমিক ৭ হবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অর্থনীতির সংস্কার খুব জরুরি। পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রার একক বিনিময় হার চালু হলে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। একক বিনিময় হারে মুদ্রাস্ফীতিও আরও কমবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে বিনিয়োগে তারল্য সংকুচিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ এবং জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের ফলে খরচ বৃদ্ধির কারণে হ্রাস মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে সংস্কার জরুরি। তবে ব্যাংক মার্জারের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া চলতি অর্থবছর দেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, ফলে বিনিয়োগের দরজা কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। খেলাপি ঋণ এখনও অনেক বেশি। রিপোর্টিং মান, সহনশীলতা ব্যবস্থা এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রক প্রয়োগের কারণে ব্যাংকিং সেক্টরের পরিস্থিতি আরও চাপে রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বিনিময় হারের নমনীয়তা তৈরি হলে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। কাঠামোগত সংস্কারগুলি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে চাবিকাঠি হবে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ তাদের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের পর টানা দুই অর্থবছর দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬ শতাংশের নিচে নামতে যাচ্ছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও মন্থর হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগে মন্দাবস্থা তৈরি হয়েছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের উচ্চ হারসহ দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে এ খাত চাপের মুখে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারি থেকে প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লেনদেন ভারসাম্যে ধারাবাহিক ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এই ষাণ¥াসিক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আর্থিক সংস্কার ও মুদ্রার একক বিনিময় হার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। মুদ্রার বিনিময় হারে অধিকতর নমনীয়তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতির বৈচিত্র্য এবং অর্থনীতির মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে কাঠামোগত সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, সেই সঙ্গে তারল্যের রাশ টেনে ধরা, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাহত হয়েছে।