প্রবাস বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ ডেস্ক :: করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, টিকা নিয়ে চলছে অসৎ এক প্রতিযোগিতা।

কারণ, তার দেশ থেকে আবিষ্কার করা টিকা স্পুটনিক-ভি এর স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক মহল। এ নিয়ে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ক্ষোভ ঝারলেন পুতিন। করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে সারাবিশ্বে যখন কাড়াকাড়ি চলছে তখন রাশিয়ায় তৈরি টিকার আন্তর্জাতিক অনুমোদন পেতে ব্যর্থতার কথা ক্ষোভের সঙ্গে তুলে ধরেন তিনি।

সম্মেলনে তিনি ভিডিও বার্তা পাঠান। এর মাধ্যমে শনিবার যুক্ত হন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে। এতে এসব দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ রাখেন তার দেশে উদ্ভাবিত টিকার স্বীকৃতি দিতে পারস্পারিক আলোচনা ও যত দ্রুত সম্ভব টিকার সনদ দিতে।

ভিডিও বার্তায় পুতিন বলেন, জি২০-এর অনুমোদন সত্ত্বেও যেসব দেশে টিকার খুব প্রয়োজন, যেসব দেশ এই টিকা পাচ্ছে না। পুতিনের এই ভাষণ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। এতে পুতিন বলেন, অনেক দেশ টিকা পাচ্ছে না। এর কারণ, অসৎ প্রতিযোগিতা, সংরক্ষণবাদিতা।

তার দেশের টিকার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, কিছু দেশ, বিশেষ করে জি২০-এর, এখনও টিকা ও টিকার সনদের বিষয়ে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নয়।

এ মাসের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিায় টিকার ভয়াবহ সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও তারা রাশিয়ায় তৈরি টিকা অনুমোদন দিতে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এতে পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়নি স্পুটনিক-ভি।

পুতিনের মতো জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে রোমে যাননি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনিও ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শি জিনপিংও টিকার স্বীকৃতি দিতে পুতিনের মতো আহ্বান জানান।

তার এ ভাষণও চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। নিজেদের দেশে করোনা ভাইরাস ইস্যুতে কঠোর বিধিনিষেধ থাকার কারণে ইতালি সফর এড়িয়ে চলছেন ভ্লাদিমির পুতিন ও শি জিনপিং। এর মধ্যে স্পুটনিক-ভি টিকার সহজপ্রাপ্যতা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ায় নতুন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ।

এর প্রেক্ষিতে এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে শনিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী ছুটি ঘোষণা করেছেন পুতিন। কর্তৃপক্ষ বলেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে একদিনে রাশিয়ায় রেকর্ড ৪০,২৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে শতকরা মাত্র ৩২.৫ ভাগ মানুষকে পূর্ণ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

যেসব মানুষকে পূর্ণ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে তাদেরকে বুস্টার ডোজ হিসেবে স্পুটনিক লাইট নামের টিকা দেয়ার সুপারিশ করেছে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে স্পুটনিক লাইট অনুমোদন করেছে রাশিয়া। এটি হলো স্পুটনিক-ভি টিকার দুটি ডোজের সমন্বয়।

একে কার্যকর টিকা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে বুস্টার ডোজ হিসেবেও। বার্তা সংস্থা তাস’কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো বলেছেন, যেহেতু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সামনে এগিয়ে আসছে, তাই টিকা প্রয়োগের বিষয়টিতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন করে শুধু স্পুটনিক লাইট দিলেই চলবে।

তিনি আরো বলেছেন, দুই ডোজ টিকা দেয়ার পরে আমরা উচ্চ মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখেছি। বিষয়টি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

তবে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি বলেছেন, ২০২১ সাল শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার টার্গেট নির্ধারণ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই টার্গেট পূরণের খুব কাছাকাছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

এখন আমাদেরকে দেখতে হবে ২০২২ সালের মধ্যভাগের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ টিকা নিশ্চিত করতে পারি কিনা। এটা আমাদেরকে করতেই হবে।

সম্মেলনের আলোচনা শেষে, সূত্র বলেছেন, সব নেতাই মারিও দ্রাঘির টার্গেট মেনে নিতে প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here