প্রবাস বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ ডেস্ক :: চৈত্রের দাবদাহে পুড়ছে দেশ : রোজাদারদের দুর্বিষহ জীবন ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না : ৩৫ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং জমিতে সেচ দেয়া হাজার হাজার সেচ পাম্প অকেজো কৃষকের মাথায় হাত ২৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা অথচ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকৃতির ওপর নির্ভরতা ।
চৈত্রের দাবদাহে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলেছে রোজাদারদের। রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। কোথাও ইফতারের সময় কোথাও সেহেরির সময় রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় দিনে ৫ ঘণ্টা থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর গ্রামের অবস্থা আরো করুণ। সিলেট, রংপুর, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০ ঘণ্টা থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। ঢাকার পাশের গাজীপুর, মানিকগঞ্জ জেলায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে চরম দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছেন রোজদার মানুষ। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দেশের সবগুলো জেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। তবে ৩৫টি জেলায় লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরে জেলা গার্মেন্টস শিল্পসহ নানা ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানকার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের চিত্র জানতে চাইলে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রের সমস্যা। ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কাপাসিয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রুহুল আমিন বলেন, এই জোনালে বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে ২৭ মেগাওয়াট। আমি পাচ্ছি সর্বোচ্চ ৭ মেগাওয়াট থেকে ৯ মেগাওয়াট। এ কারণেই জনদুর্ভোগ।
গত ১৩ মার্চ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, চলমান গ্রীষ্মকাল, সেচ মৌসুম ও পবিত্র রমজানে জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার সকলকে স্বস্তি দেবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ আমাদের মূল লক্ষ্য। সেচ কাজের জন্য রাত বারোটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত বৈদ্যুতিক পাম্প চালু থাকবে। প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবে চলতি মাসে তার মিল নেই বিদ্যুৎ সেক্টরে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না পল্লী বিদ্যুৎ। তাই বিতরণেও ২৭ জেলায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিংয়ে ভুগছে মানুষ। আগামীতে আরো পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দেশের ২৫ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও রংপুর বিভাগে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। সিলেটে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশোডিং হচ্ছে। গরমে চাহিদা বাড়লেও জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে গ্যাস সরবরাহ এবার কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। যেসব জেলায় বেশি লোডশোডিং হচ্ছে, সে জেলাগুলো হচ্ছে, কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, জয়পুরহাট, নওগাঁ, পাবনা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, ঢাকার ধামরাই ও সাভার, গাজীপুর এবং লক্ষীপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, রবিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জেলায় গ্রামে গ্রামে চলছে গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং তবে সব উপজেলায় নয়। আর কয়েক দিনের মধ্যে বোরো ধানে থোড় বের হবে আবার অনেক জেলায় ধানের থোড় বের হচ্ছে। তার আগেই দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। এদিকে বিদ্যুতে লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক জেলায় সাধারণ কৃষকের হাজার হাজার সেচ পাম্প অকেজো হয়েছে, আবার অনেক পাম্প পোড়া গেছে।
পাওয়ার সেলের পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত বছর ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। দেশে বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৬ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী শতভাগ। পিজিসিবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ১ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। সন্ধ্যা ৯টায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৭০ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৫৭১ মেগাওয়াট। এ সময় ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৯৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ তখন গ্রাহক পর্যায়ে ১১৯৯ মেগাওয়াট বা তারচেয়ে বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদা ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৬৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী দুই সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকো থেকে বলা হয়, সরবরাহ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং হচ্ছে না। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু কিছু এলাকায় বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্রে জানা গেছে, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। তাই বিতরণেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম. রংপুর-ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছুস্থানে অপেক্ষাকৃত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। লোডশেডিং কম বরিশাল বিভাগে।
গ্রীষ্ম মৌসুমে গত কয়েক বছর থেকে দিনে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিং হয়েছে। সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন না হলেও বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার কারণে খরচ বেড়েছে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও কেন্দ্রভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিবছর বাড়ছে ভর্তুকির চাপ। এ চাপ সামলাতে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চায় সরকার। আগামী তিন বছর ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সরকার। যদিও গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এদিকে গ্রীষ্ম মৌসুমে দিনে কখন কত চাহিদা হবে, কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে, কী পরিমাণ জ্বালানি লাগবে, এসব তো জানা কথা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এবার গ্রীষ্মে চাহিদা সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াতে পারে। পবিত্র রমযান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে তারা প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিল। তাহলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলো না কেন। জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা কেন থাকবে না এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গত সপ্তাহে দিনের বেলায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ওই সময়ে সরবরাহ ঘাটতি ছিল ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, যা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। এর পুরোটাই করা হয়েছে মূলত ঢাকার বাইরে, দেশের বিভিন্ন গ্রাম এলাকায়।
ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় লোডশেডিং তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পিডিবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো। ঢাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকায় লোডশেডিং নেই বলে জানিয়েছে ডেসকো ও ডিপিডিসি। কারিগরি কারণে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। গতকাল দিনে ডেসকোর সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট ও ডিপিডিসির চাহিদা ছিল ১ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট। পুরোটাই সরবরাহ পেয়েছে তারা। দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। একই সময় তারা সরবরাহ পেয়েছে ৬ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। মানে ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে আরইবির এলাকায়।
সারা দেশে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হলে ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এ হিসাবে ২ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতির জন্য দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করতে হয়। ঢাকাসহ অধিকাংশ শহর এলাকা লোডশেডিংয়ের বাইরে রাখা হয়েছে। বাকি গ্রাম এলাকায় সমহারে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে না। এতে কোনো কোনো গ্রামে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টাও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বেশি,সেখানে সরবরাহ বেশি। এ কারণে বরিশাল অঞ্চলের গ্রাম এলাকায় লোডশেডিং নেই। সিলেটে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে লোডশেডিং।
গত কয়েকদিন ধরে সিলেট জেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহকদের চাহিদা ছিল ১০৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরবরাহ ছিল ৫৬ মেগাওয়াট। প্রায় ৫৩ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে এখন চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। দিনাজপুরে এলাকাভেদে দিনে ও রাতে ৫-৬ বার পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। নওগাঁয় জেলা শহরসহ ১১টি উপজেলায় দিনের অর্ধেক সময়ই ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতের অভাবে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। এদিকে নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর উপমহাব্যবস্থাপক রাজ্জাকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, চাহিদা যত বাড়ছে, ঘাটতিও তত বাড়ছে। চলতি মাস থেকে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব জেলায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা বেশি।
নেত্রকোনার গ্রামগুলোতে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। সেখানে কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। জেলার আটপাড়া উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিক মোহাম্মদ বলেন, প্রায় সকাল ছয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ছয়বারের মতো লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। এতে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। আজকালের মধ্যে এটি চালুর কথা রয়েছে। এটি চালু হলে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। কয়লা থেকে উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট। সক্ষমতার প্রায় পুরোটা ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া থাকায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা আছে। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া জটিলতাও কাটেনি। জ্বালানি তেল আমদানির জন্য নিয়মিত ডলার পাচ্ছে না তারা। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা আছে প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট। দিনের বেলায় এক হাজার মেগাওয়াটের কম উৎপাদন করা হচ্ছে। রাতে উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ তিন হাজার মেগাওয়াট। ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাসিন্দা রফিক মাস্টার বলেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। গরম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। গত বছরও ভরপুর গরমের মৌসুমেও বিদ্যুতের লোডশেডিং সহ্য করতে হয়েছিল। দিনে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং, ভোগান্তিতে লাখ মানুষ।
নেসকো বগুড়া সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বাড়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। ইফতার ও সাহ্রির সময়ও অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঈদের বাজারেও বেচাকেনা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গ্রাহকসেবার সুবিধার্থে বগুড়া শহরকে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, ২, ৩ ও ৪ অঞ্চলে ভাগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সংস্থাটি। শহর ছাড়াও দুপচাঁচিয়া, শেরপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নেসকো। এই চার অঞ্চলে গড়ে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১০৫ মেগাওয়াট। বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে ৭০-৮০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। চাহিদার তুলনায় ৩০ শতাংশ সরবরাহে ঘাটতি থাকায় প্রতিদিন চার ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও চলছে লোডশেডিং। বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, এখন গড়ে এই অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট, সরবরাহ মিলছে ৬৫ থেকে ৭০ মেগাওয়াট। ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে গড়ে ১৫ মেগাওয়াট। এর ফলে চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় দিন-রাতের ১৫ শতাংশ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। গত ৫/৭ দিন বিদ্যুতের মারাত্মক লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ এসে মাত্র আধাঘণ্টা থাকে। বিদ্যুৎ আসে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা পর। এ ছাড়া সার্ভিসের নামে সপ্তাহে শুক্রবার বা শনিবার সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না। কিশোরগঞ্জ ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর কিরোন বলেন, তিন-চারবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করলেও সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা রাত ১২টার পর থেকে। তখন ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে রমজানের শেষ দশকে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। ইফতার, সাহ্রি ও তারাবির নামাজের সময়েও থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরা। এ ছাড়া বিভিন্ন কলকারখানাসহ চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলায় দিনে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৭ মেগাওয়াট। আর রাতে ১৮ মেগাওয়াটের জায়গায় ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি থাকার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মীর গোলাম ফারুক বলেন, ঈদের আগে এই সমস্যার সমাধান হবে না। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় মাত্র অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি।
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, সরকার রেন্টাল, কুইকরেন্টাল বিদ্যুতের কথা বলে সাফল্যের ঢোল বাজাচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ খাতকে এখনো প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। গরমে যখন মানুষের বেশি করে বিদ্যুৎ দরকার, তখন বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।