ব্রিটেনে বসবাসরত অবৈধ লোকদের বৈধতা নিয়ে ইমেগ্রেশন আইনে পরিবর্তন আসতে পারে

0
1181

প্রবাস বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ ডেস্কঃ ইমিগ্রান্টদের দেশ ব্রিটেন। আর এই দেশে ইমিগ্রান্টদের সবচেয়ে খাটো করে দেখা হয়। যেখানে ইউরোপের অন্যান্য দেশে অবৈধদের অনেক সময় মানবাধীকার দিক বেবেচনা করে সাধারণ ক্ষমা  দেয়া হয় সেখানে ব্রিটেনে ইমিগ্রেশন আইন এখনও একটি কঠিন ব্যাপার।

ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে বৈধভাবে বসবাসের স্বীকৃতি দেওয়ার সংস্কৃতি বিদ্যমান। স্প্যানিশ সরকার গত ২০ বছরে ছয়বার এমন করে সাধারণ ক্ষমার আওতায় অনথিভুক্তদের বৈধতা দিয়েছে। ইতালি সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে ৫ বার।

এবার নতুন প্রধানমন্ত্রীর বরিস জনসন ক্ষমতায় আসার পর নতুন একটি মন্তব্যে দেশটিতে বসবাসরত অবৈধদের ভাগ্য যেন পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এর ফলে হয়ত ব্রিটেনে বসবাসরত এক লাখেরও বেশি অনথিভুক্ত বাংলাদেশি অভিবাসী সেখানে বসবাসের বৈধতা পেতে যাচ্ছেন বলে আশ্বাস মিলেছে।

বৃহস্প‌তিবার দেশটির পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হকের এক প্রশ্নের জবাবে নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বৈধতার প্রশ্নে তার সরকার নীতিগতভাবে আন্তরিক।

উল্লেখ্য, লন্ডনের মেয়র থাকাকালে জনসন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ৫ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে এই সংখ্যা প্রায় ৫ লাখের বেশি বৈধ অভিবাসীর পাশাপাশি সেখানে এক লাখেরও বেশি অনথিভুক্ত বাংলাদেশী রয়েছেন। এই সব অবৈধ লোকেরা ১০-১৫ বছর ধরে তারা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

২০০৯ সালে লন্ডনের মেয়র থাকাকালে জনসন সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেছিলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে যারা ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাদের বৈধতা দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে একদিকে বৈধ শ্রমিক সংকটের সুরাহা হবে, অপরদিকে তাদের আয় থেকে সরকারি কোষাগারে কর জমা পড়ার পরিমাণ বাড়বে।

এতে দুই পক্ষই লাভবান হবে। বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জনসনের সেই আহ্বানের কথা সামনে এনে লন্ডনের ইলিং এলাকা থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক তার উদ্দেশে বলেন, এখন তো আপ‌নি প্রধানমন্ত্রী, এখন কি অনথিভুক্তদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে আপনি প্রমাণ করবেন যে আপনার কথার সঙ্গে কাজের মিল রয়েছে?

রূপার প্রশ্নের জবাবে বরিস জনসন বলেন, এটা সত্যি। আমি সরকারে থাকাবস্থায় বিষয়টি কয়েকবার উত্থাপন করেছি।  তবে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উত্থাপন করলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পাইনি।

তিনি বলেন, ব্রিটেনে বসবাসরত অনথিভুক্ত প্রায় পাচঁ লাখ মানুষকে এদেশ থেকে বের করে দিতে চায় সরকার। তবে তাদের বিষয়টি দেখা উচিত। আর এই বিষয়‌টি সরকার নীতিগতভাবে আন্তরিক বলেও দাবি করেন তিনি।

বরিস জনসন বলেন, যারা কোনও অপরাধে না জড়িয়ে বছরের পর বছর এখানে বসবাস করছেন আমার মনে হয় আইনিভাবে তারা সঠিক অবস্থানেই আছেন। তাদের নিয়ে অনেক জটিলতার ব্যাপার রয়েছে। যেমনটা আমরা দেখেছি উইন্ডরাশ এর ঘটনায়। আমি রুপা হকের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে চাই। হ্যাঁ, আমি মনে করি, যারা এদেশে বছরের পর বছর কোন অপরাধে না জ‌ড়িয়ে বসবাস করছে, কাজ করছে কিন্তু ট্যাক্স দিতে পারছে না, তা‌দের বিষয়টি দেখা উচিত। সত্যি বলতে আইন ইতোমধ্যেই তাদের থাকার অধিকার দিয়েছে। রুপা হক যেই নীতির কথা বলছেন তার আগে,  তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার আগে আমাদের অর্থনৈতিক সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ব্রিটেনে বসবাসকারীদের সাধারণ ক্ষমার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বৃহস্প‌তিবারের বক্তব্য খুব আশাব্যাঞ্জক।  তাতে মনে হয়েছে দ্রুতই সমাধান বা সুখবর হতে পারে। এতে বছরের পর বছর ধরে এখানে বসবাসরত এক লাখেরও বেশি অনথিভুক্ত বাংলাদেশীর বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ মিলবে।

উল্লেখ্য, ২০০০ সালে ওভার স্টেয়ার রেগুলেশন ২০০০ নামে আইন করে স্বরাষ্ট্র দফতর নীতিমালার মধ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ব্রিটেনে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিলো।

তারপর জুলাই ২০০৬ সালে আটকে পড়া ৪ লাখ ৫০ হাজার ফাইলের ওপর ৫ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্র দফতর গ্রহণ করেছিলো, যা বহুলভাবে লিগ্যাসি নামে পরিচিত। তার মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার (একশত একষট্টি হাজার) মানুষকে বিভিন্নভাবে বৈধতা দেওয়া হয় এবং ফাইলগুলো বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রত্যাখান করে ২০১১ সালে লিগেসির পরিসমাপ্তি ঘটে।

এর আগে ২০১০ সালের ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির তৎকালীন প্রধান নিক ক্লেগ ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে বৈধতা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলেন, যার নাম ছিলো রুট টু সিটিজেনশিপ।

তার প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো ছিল, আবেদনকারীকে যুক্তরাজ্যে অন্তত ১০ বছর বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে এবং কোন অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না। আবেদনকারীকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। এছাড়া তাকে একটি নির্ধারিত পদ্বতিতে নাগরিকত্ব অর্জনের নীতিমালা প্রদান করা হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটা পূরণ করতে হবে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here