প্রবাস বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ ডেস্ক :: দিনভর ভারী বর্ষণে সিলেট নগরীতে গত বৃহস্পতিবার ফের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ডুবে যায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বেশ কিছু এলাকা। এদিকে, সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, ‘ছুটির সময় উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল কর্মকর্তাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন’। সিলেটে আগামী তিন দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ সজিব হোসাইন জানান, সিলেটে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১০৫ মিলিমিটার, ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৮১ মিলিমিটার, ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ১১ এবং ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেটে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও সিলেটে বর্তমানে বজ্রমেঘের অবস্থান রয়েছে। তাই সবাইকে বজ্রপাত থেকে সাবধান থাকতে হবে।
ইন্ডিয়ান মিডিওরলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আইএমডি ও সিলেট আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসকও জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চেরাপুঞ্জি এবং সিলেট মিলিয়ে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৩৫ মিমি। আরও বৃষ্টি হবার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, ২৯ মে পানি আসার পূর্বে ২ দিন মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০০ মিলিমিটারের উপরে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে, ভারী বর্ষণে সিলেট নগরীসহ আশপাশ এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েন নিচু এলাকার লোকজন। নগরীর কুয়ারপাড় এলাকায় গাভিয়ার খালের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে ২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২ জুন রাতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরজুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন অধিকাংশ এলাকার পানি পরদিন নেমে যায়। তবে, অন্তত ১০-১২টি এলাকার পানি নামতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল। এ অবস্থায় ৮ জুন রাতে আবারও ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর শতাধিক এলাকা প্লাবিত হয়। এর পরে ১০ জুন আবারও বৃষ্টিতে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর শাহজালাল উপশহর, তেররতন, সোনারপাড়া, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মাছিমপুর ,তালতলা, কুয়ারপার, কাজলশাহ ও বাগবাড়ি এলাকায় বৃষ্টির পানি জমেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি। তবে উপশহর এলাকা বেশি প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। গতকালের বৃষ্টিতে নগরীর ১৫ থেকে ২০টি নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
নগরীর বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা, সাংবাদিক আহমদ ইয়াসিন খান জানান, পানিবন্দী থাকা এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। প্রতিদিন সকালে তাদের বাসায় পানি উঠে। নামে সন্ধ্যার পর। জলাবদ্ধ পানি এরই মধ্যে তাদের বাসার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তারা অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
এদিকে ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন, যেহেতু বৃষ্টি হলেই বারবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তাই এর স্থায়ী সমাধানে নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী খনন, ছড়া ও খালগুলো পরিকল্পিতভাবে খনন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সুরমা নদীর তীরে স্থায়ী সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সিলেটে যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে প্রচুর পানি গড়াচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও নেমে যাবে। নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানান তিনি।