প্রবাস বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ ডেস্ক :: করোনাদুর্যোগ সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশে সাতদেশের কূটনীতিক। আর এতে যারপর নাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এবং ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর প্রিন্সিপ্যিাল ডেপুটি অ্যাসিস্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস এক টুইট বার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডিজিটাল আইনের অধীনে নতুন করে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশের মানুষ যেন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে টুইট বার্তায় তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতাই গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং এই মহামারির সময়ে এটি মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে।

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার অন্য আরেক টুইট বার্তায় লিখেছেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে মুক্ত ও স্বাধীন মিডিয়ার নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য পরিবেশন করতে পারার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখা এবং সাংবাদিকদের ঠিকমতো কাজ করতে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার আহবান জানিয়ে শুক্রবার আরও টুইট করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপিয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে তেরিঙ্ক, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট ডিকসন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভেরওয়েজ, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লোট স্লাইটার এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রাপ পিটারসন।

ফেক নিউজ একটি বড় ধরনের সমস্যা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত রেনসে তেরিঙ্ক বলেন, এই সংকটজনক সময়ে বাক স্বাধীনতা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই সাংবাদিকদের স্বাধীন ও মুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে।

রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন টুইট বার্তায় লিখেছেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নির্ভরযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ অপরিহার্য। অন্য চারজন রাষ্ট্রদূতও একই ধরনের টুইট বার্তা দিয়েছেন। তারা আরও লিখেছেন, তথ্যভিত্তিক সংবাদের জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতার নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

ইউএনবি’র খবরে বলা হয়, ঢাকায় দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিকদের টুইট বার্তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমন বলেন, কূটনীতিকদের এ ধরনের বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। তাদের কিছু বলার থাকলে সেটা কূটনৈতিক রীতিতে সরকারকে বলতে পারতেন। তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে রাজনৈতিক কর্মী, কার্টুনিস্ট, ও লেখকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। শুক্রবার সংস্থার ওয়েব সাইটে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, কেবল ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ পোস্ট করার কারণে মামলা না করে বরং আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত সমালোচনাগুলো গ্রহণ করা। একই সঙ্গে কোভিড -১৯-এর বিষয়ে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থায় কোন ফাঁক থাকলে তা বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিক, ডাক্তার এবং নার্স ও অ্যাক্টিভিস্টদের হয়রানি না করে বরং সহায়তা, স্বচ্ছতা এবং সম্পদ নিয়ে তাদের উদ্বেগগুলোকে আমলে নেওয়া উচিত।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। করোনাভাইরাস নিয়ে সমালোচনা করায় সম্প্রতি ১১ জনের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং কারাগারে থাকা চারজনকে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানায় হিউম্যান রাইট ওয়াচ।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here