তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন  ছবি : হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট থেকে

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে মার্কিন গোয়েন্দারা ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তি এবং রণাঙ্গনে টিকে থাকার মেয়াদ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছিলেন। কিন্তু দ্রুত পরিবর্তমান ঘটনার প্রেক্ষাপটে সামরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য দিতে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণে মার্কিন পরিকল্পনাকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে গলদঘর্ম হন। ভারত কখন প্রত্যক্ষ যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে, সে তথ্য না পাওয়াকে তাঁরা বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতার নমুনা হিসেবে দেখেছেন। ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পরও সিআইএ সে ব্যাপারে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়।

মুক্তিযুদ্ধপর্বে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পরাজয়ের’ কারণ অনুসন্ধানে ১৯৭২ সালের গোড়ায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। সে সমীক্ষার নথিতে এসব তথ্য জানা গেছে।

সমীক্ষাটি বলছে, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বরে পশ্চিম ফ্রন্টে কোন পক্ষ প্রথম আঘাত হেনেছিল, গোয়েন্দারা তা-ও জানাতে পারেনি। যুদ্ধ বেধে যাওয়ার পর মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা অপেক্ষা করছিলেন, পাকিস্তান কখন ভারতের ওপর পাল্টা হামলা করবে। ওই প্রতিবেদনের ভাষায়, ‘যা কখনোই বাস্তবে রূপ নেয়নি।’ উল্লেখ্য, একাত্তরের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের ওপর প্রথম বিমান হামলা চালিয়ে প্রচার করেছিল, ভারতই হামলা শুরু করেছে।

মুক্তিযুদ্ধপর্বে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পরাজয়ের’ কারণ অনুসন্ধানে ১৯৭২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন।

ভারত যে বাংলাদেশের ঘোষিত স্বাধীনতায় সমর্থন দেবে, তা বুঝতেও ওয়াশিংটনের ৮০ দিন লেগে যায়। একাত্তরের নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও মার্কিন গোয়েন্দারা তথ্য দিয়েছিল, ‘সম্ভাব্য পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে সোভিয়েত পিছু হটবে।’

সমীক্ষাটিতে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের ওঠানামার ‘তিনটি দৃশ্যমান সন্ধিক্ষণ’কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে তারা স্বীকার করে, যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র শুধু পশ্চিম পাকিস্তান রক্ষায় উদ্বিগ্ন ছিল। ‘এ কারণে কখন কীভাবে সপ্তম নৌবহর মোতায়েন করা হবে, সেটাই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ভারতীয় জলসীমায় এর উপস্থিতি যুদ্ধের ফলাফলে কী প্রতিক্রিয়া ঘটাবে, তার কোনো সমন্বিত গোয়েন্দা মূল্যায়ন ছিল না।’

নথির ইতিহাস

সমীক্ষার এই ১০ পৃষ্ঠার নথিটি বহু আগে অবমুক্ত হলেও মার্কিন প্রশাসন এটি অনলাইনে দেয়নি। রোয়েদাদ খানের দ্য আমেরিকান পেপার্স, সিক্রেট অ্যান্ড কনফিডেনশিয়াল ডকুমেন্টস: ১৯৬৫-১৯৭৩, পাকিস্তানি লেখক এফ এস আইজাজউদ্দিনের দ্য হোয়াইট হাউস অ্যান্ড পাকিস্তান, সিক্রেট ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস: ১৯৬৯-১৯৭৪ এবং ইনায়েতুর রহিম ও জয়েস এল রহমান সম্পাদিত ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস: ১৯৫৩-১৯৭৩—মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত মার্কিন নথিপত্রের এই তিন বৃহৎ সংকলনেও নথিটি নেই। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাফেজখানা থেকে এই প্রতিবেদক নথিটি সংগ্রহ করেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ‘এনএসসিআইসি ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রপোজড স্টাডিজ’ নামে সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘আমি বিশ্বাস করি সমীক্ষা চালাতে আমাদের সরকারের সব বিভাগ ও সংস্থা সাহায্য করবে।’

১৯৭১ সালের ৬ মার্চ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন সরকার ‘এশীয় উপমহাদেশে সংকট’ বিষয়ে ২৫টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে।

নথির গায়ে লেখা ‘গোপনীয়/বিতরণের জন্য নয়’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে এটি পাঠানো হয়েছিল কিনা বোঝা যায়নি। নথিটি হোয়াইট হাউসে পাঠানোর জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তৎকালীন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি থিওডর এল এলিয়ট স্বাক্ষর দিয়ে ১৯৭২ সালের ৫ জুন আন্ডার সেক্রেটারির কাছে অনুমতির জন্য পেশ করেছিলেন। খসড়ার ওপর কলমে ক্রসচিহ্ন দেওয়া ‘অনুমোদন’ ও ‘অননুমোদন’-এর ঘর দুটো স্বাক্ষরহীন। থিওডর এলিয়ট আন্ডার সেক্রেটারিকে লিখেছেন, ‘আপনি জানেন যে জনাব কিসিঞ্জার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আপনি তা সমর্থনও করেছেন। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তান সংকটের বিষয়ে সিআইএর সহায়তায় আইএনআর সমীক্ষাটি প্রস্তুত করেছে।’

১০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘ভারত-পাকিস্তানের সংকটকালে নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা উদ্বেগ’ (মেজর ইন্টেলিজেন্স কনসার্নস অব দ্য পলিসি মেকারস ডিউরিং দ্য ইন্ডো-পাকিস্তানি ক্রাইসিস)।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন সরকার ‘এশীয় উপমহাদেশে সংকট’ বিষয়ে ২৫টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছে।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার
ছবি : এএফপি

তিন সন্ধিক্ষণ

সমীক্ষা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধকালে মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘তিনটি সন্ধিক্ষণ’ মোকাবিলা করেছে।

এক. একাত্তরের ৬ মার্চের এক সভায় মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা এ মতে পৌঁছান যে ভারত বেশি হলে পাকিস্তানের ‘বিচ্ছিন্নতায়’ সহায়তা দেবে, সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না। পাকিস্তানি নীতির অস্পষ্টতা এবং ভারত কেন বিচ্ছিন্নতাকে সমর্থন দেবে, তা নিয়েই নীতিনির্ধারকেরা মনোযোগী ছিলেন।

ভারত যে বাংলাদেশের ঘোষিত স্বাধীনতায় সমর্থন দেবে, তা বুঝতে ওয়াশিংটনের ৮০ দিন লেগে যায়।

দুই. এরপর ৮০ দিন পেরিয়ে যায়। সমীক্ষাটি বলেছে, ২৬ মে ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভায় প্রথমবারের মতো ‘বিচ্ছিন্নতা’কে ভারতীয় নীতি হিসেবে দেখা হয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের বিপদ স্পষ্ট হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে, চীন যুদ্ধে জড়াবে না। তবে চীনের হুমকি বা সোভিয়েত উপদেশ ভারতের মনোভাবে কতটা প্রভাব ফেলবে, মার্কিন গোয়েন্দারা তা বুঝতে ব্যর্থ হন। ভারতীয় নীতির ওপর শরণার্থী সমস্যার প্রভাবও গোয়েন্দারা বুঝতে পারেননি।

তিন. ১২ নভেম্বর প্রথম ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভায় জানানো হয়, যুদ্ধ কিংবা পূর্ববঙ্গকে হারানো—এই দুটির একটিকে বেছে নিতে ভারত পাকিস্তানকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।

গোয়েন্দা ব্যর্থতার তালিকায় এ-ও বলা হয়েছে, নভেম্বরে ধরা পড়ে যে ‘গেরিলা আন্দোলন ক্রমশ কার্যকর হয়ে উঠছে।’

মুক্তিযুদ্ধের তিন ধাপ

মার্কিন এই সমীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অসহযোগ আন্দোলন থেকে ডিসেম্বরের বিজয় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাধারাকেও তারা তিনটি ধাপে ভাগ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ধাপে ২৬ মার্চেই বৈঠকে বসেছিল ওয়াশিংটন স্পেশাল গ্রুপ। তাদের সামনে চারটি প্রশ্ন।

১. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ইয়াহিয়ার নীতিগত ঘোষণা ঢাকা বেতারে ভেসে আসার পরপরই মুজিব-ইয়াহিয়া সংলাপ কেন ভেঙে গেল?

২. ভুট্টো কি পশ্চিম পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা?

৩. শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর কি বিদ্রোহ টিকবে?

৪. বিদ্রোহের মুখে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর সামর্থ্য কতটা? সভায় পাকিস্তানের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়।

বৈঠকে বলা হয়েছিল, ভারত তার জাতীয় স্বার্থ খুঁজে নেবে পাকিস্তানের টিকে থাকার মধ্যেই। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।

প্রথম এই ধাপে সুনির্দিষ্ট কোনো মার্কিন নীতি ছিল না। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

এরপর দ্বিতীয় ধাপের সূচনা। ২৬ মে ওয়াশিংটন স্পেশাল গ্রুপের সভায় পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধি বলেন, ২৫ মার্চের পর অবিভক্ত পাকিস্তানে বাঙালি প্রধানমন্ত্রী দেখতে ভারতের ইচ্ছা কর্পূরের মতো উবে গেছে। এক ঊর্ধ্বতন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, সামরিক বাহিনী যুদ্ধে জড়াতে নারাজ, তবে রাজনীতিকেরা সম্মত।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র শুধু পশ্চিম পাকিস্তান রক্ষায় উদ্বিগ্ন ছিল।

সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের ২৩ ও ৩০ জুলাই সভায় ভারতকে নিবৃত্ত করতে সোভিয়েত ইউনিয়নকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন আলোচিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নই যে ভারতের পাশে দাঁড়াতে পারে, ৯ আগস্ট মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত সে সম্ভাবনা তাদের মাথায় আসেনি।

মধ্য আগস্টে তারা প্রথম জানতে পারে, শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচার চলছে। তবে সেপ্টেম্বরেও তারা নিশ্চিত ছিল না, তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে কি না।

পররাষ্ট্র দপ্তর ও সিআইএর প্রতিনিধিরা বলেছেন, তাঁরা মনে করেন ভারত আক্রমণে যাবে না।

৭ অক্টোবরের সভায় গোয়েন্দারা বলেছেন, মার্কিন পরামর্শে সোভিয়েত ভারতকে নিবৃত্ত করতে সচেষ্ট। পাকিস্তানের ভয় গেরিলা, আর ভারতের ভয় চীনপন্থীরা বিদ্রোহের নেতৃত্বে চলে আসে কি না।

নভেম্বরে অস্ত্র বোঝাই ৩টি রুশ জাহাজ এবং ১০টি পরিবহন বিমানের ভারতে যাত্রা করার খবর পেয়ে তারা সিদ্ধান্তে আসে যে রুশরা সম্ভাব্য যুদ্ধে ভারতকে সমর্থন দিতে চলেছে।

প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরুর পটভূমিতে তৃতীয় ধাপের সূচনা। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ভারত দুবার পাকিস্তানি জঙ্গি বিমানের তার আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং ২২ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের কাছে তিনটি পাকিস্তানি এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে। পাকিস্তান বলে, ভারত সর্বাত্মক আক্রমণ করেছে পূর্ব পাকিস্তানে। এই দিন ওয়াশিংটন গ্রুপের সভায় সিআইএ পূর্ববঙ্গে ব্যাপক ভারতীয় আক্রমণ নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেনি।

জাতিসংঘে না গিয়ে ইয়াহিয়া রাজনৈতিক আপস করুক, মার্কিন সরকারের এমন একটি সুপারিশ গ্রুপটি নাকচ করে দেয়।

লক্ষ করার বিষয়, ২৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন লোকসভায় তথ্য প্রকাশ করছেন যে পাকিস্তানি হামলা থেকে ‘আত্মরক্ষা’র জন্য ভারতকে পাল্টা হামলা করতে হয়েছে, তখন চলমান সে বৈঠকে সিআইএ বলেছে, তারা হামলার কোনো ‘দৃশ্যমান প্রমাণ’ জোগাড় করতে পারেনি। গোয়েন্দাদের এ দিন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণ হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২৯ নভেম্বরের বৈঠকে বলা হয়, সরাসরি হস্তক্ষেপের জন্য ভারতীয় সেনাদের চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ লাগবে, কিন্তু টেকসই প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে অনেক বেশি সময় লেগে যাবে।

১ ডিসেম্বর গ্রুপটি এই মতে আসে যে পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা দুই থেকে তিন সপ্তাহ টিকতে পারবে। পক্ষান্তরে ভারত ৩০ দিনের যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান জয় করে নিতে পারে। ৩ ডিসেম্বর তারা বলে, পাকিস্তান নিজে ভারতে হামলা চালিয়ে মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা প্রথম আক্রান্ত হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর সিআইএ বলে, সোভিয়েত মনোভাব ‘বিরোধিতা’ থেকে ‘বৈরিতা’য় গড়িয়েছে।

৬ ডিসেম্বর সিআইএ বলে, পশ্চিম ফ্রন্টে পাকিস্তান পতন ঠেকাতে পারবে আর মাত্র তিন সপ্তাহ। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভেঙে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও সোভিয়েতের সঙ্গে কী বলবে, সে প্রস্তুতি নেয়। ৭ ডিসেম্বর সিআইএ বলে, পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান আর ৪৮ ঘণ্টার বেশি টিকবে না।

সিআইএকে এই মর্মে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়, পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তান যথাক্রমে ভারতের ‘স্যাটেলাইট’ ও ‘ভ্যাসাল’ রাষ্ট্র হলে কী ঘটতে পারে। দুই সপ্তাহ আগে ভারতকে সাহায্য বন্ধ করলে কি তাকে থামানো যেত? পশ্চিম পাকিস্তান রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র কী করতে পারে?

১৯৭১ সালের ২৬ মে মার্কিনদের উচ্চতর পর্যায়ের বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের ‘বিচ্ছিন্নতাকে প্রথমবারের মতো ভারতীয় নীতির একটি প্রতিজ্ঞা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। তাদের মতে, ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের বিপদ সে দিনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সব গোয়েন্দা তথ্য ও অনুমান ব্যর্থ করে ১৬ ডিসেম্বর পূর্ববঙ্গের বাঙালি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here