প্রবাস বার্তা ২৪ ডটকম আমেরিকা প্রতিনিধি ইব্রাহীম চৌধুরী :: যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর মিছিলে বাংলাদেশিদের নাম প্রায় প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার করোনায় আরও ৭ বাংলাদেশি মারা গেছেন।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন রউফ আহমেদ, মোহাম্মদ আব্দুল হক অতুল, তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ রহমান, আবু তাহের, ফরিদ উদ্দিন (ভার্জিনিয়া) ও আমীরুন্নেসা।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের লকডাউনের মেয়াদ ১৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো নিজেই বলেছেন, পরিস্থিতি এখনো লকডাউন তোলার মতো পর্যায়ে যায়নি। ধাপে ধাপে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া হবে। অবস্থার উন্নতি অব্যাহত থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমো মনে করছেন, সামনের এক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এক মাস পর পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা তিনি নিজেও জানেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন।

উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন যাঁরা হাসপাতালে আসছেন, তাঁরা চরম সংকটজনক অবস্থায় আসছেন। হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটগুলো চাপ সামাল দিতে পারছে না।

প্রতিদিন শুধু নিউইয়র্ক নগরীর হাসপাতালেই ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে সংকটজনক অবস্থায় আইসিইউ ইউনিটে পাঠাতে হচ্ছে। নগরীর এসব হাসপাতালকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০ জন সংকটজনক রোগীকে সামাল দিতে হচ্ছে। এসব রোগীর মধ্যে কতজন ফিরবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

ব্রুকলিনের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার পিয়া ড্যানিয়েল নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেছেন, আইসিইউতে থাকা রোগীদের অধিকাংশের অবস্থাই সংকটজনক।

বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে লোকজনকে সতর্কভাবে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। ফেডারেল অর্থ সহযোগিতা অনেকেই ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন।

জ্যাকসন হাইটসের ইত্যাদি গ্রোসারিতে দিনভর লোকজনকে নিরাপদে বাজার করতে দেখা গেছে। মুখে মাস্ক বা কাপড় বেঁধে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়াচ্ছেন সবাই।

মালিকেরাও সতর্কতার সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করছেন। গ্রোসারি–কর্মী শিরিল হাসান জানালেন, লোকজন সরকারি অর্থ হাতে পাওয়ার পর বাজার করছেন বেশি করে। অনেকেই মাসের বাজার নিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ঘনঘন দোকানে আসতে না হয়।

বেকারভাতার আবেদন যাঁরা করেছেন, তাঁদের অনেকেই ভাড়া পেতে শুরু করেছেন। নিউইয়র্ক, নিউজার্সির অনেক আবেদনকারী জানিয়েছেন, তাঁরা এখনো অপেক্ষায় আছেন।

অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলো জানাচ্ছে, অতিরিক্ত আবেদন সামাল দিতে তাদের সময় লাগছে।

আফ্রিকায় ইবোলা প্রাদুর্ভাবের সময় আমেরিকান বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন মৈনুস সুলতান। জর্জিয়ার এক প্রান্তিক নগরী থেকে তিনি জানালেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে আরও নানা ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বহু এলাকায় লোকজনকে ঘরে খাবার বা অন্যান্য সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক পাওয়া যাচ্ছে না।

আমেরিকার আইন অনুযায়ী, খাবার বা কোনো সাহায্য নিয়ে কারও দরজায় কড়া নাড়ার সুযোগ নেই। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই স্বেচ্ছাসেবকদের এই কাজ করতে হয়। এ কারণে প্রান্তিক আমেরিকার নানা এলাকায় ঘরে থাকা লোকজনের কাছে সাহায্য পৌঁছানো কঠিন বলে জানালেন মৈনুস সুলতান।

করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি মানুষ নিউইয়র্কেই মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষ।

ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যমতে, আমেরিকায় করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬১৭ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৬ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ। সুস্থ হয়েছেন ৫৭ হাজার ২৩২ জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here