অফিস থেকে এসেই তমালের মিজাজ বিগড়ে গেলো।লতাকে উদ্দেশ্য করে সব রাগ ঝাড়তে লাগলো।সারাদিন করো কি?বসে বসে শুধু মোবাইল টি’ফো।নিজে কামাই করলে বুঝতে। এতটাকা মোবাইলের বিল আসে কোথা থেকে।লতা অপরাধীর মতো তমালের জামা কাপড় জায়গা মতো রাখতে লাগলো। নাস্তা রেডি করার আগেই তমাল টেবিলের কাছে এসে আবার বলতে লাগলো, কী ব্যাপার সারাদিন কাজ করে এসে, একটু নাস্তাও কি রেডি পাবো না? এই দিচ্ছি বলে লতা তাড়াহুড়া করে কিচেনে চলে গেলো।

সবেমাত্র বিএ পাশ করে ঘরে বসা। এমনি সময় সম্বন্ধ আসতেই বাবা রাজি হয়ে গেলেন। স্কুল শিক্ষক বাবা।তিন বোন আর মা তাই নিয়ে সংসার। বিয়ের পর স্বামীর চাকুরীর সুবাধে লতা ঢাকায় চলে আসে। ঢাকা এসে আদর্শ গৃহিনীর দায়িত্ব পালন করলেও ছাত্রজীবনের সখ ছাড়তে পারেনি।আর তাই লুকিয়ে লুকিয়ে এখনও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করে।

বিয়ের পর স্বামী নামক জন্তুর কাছে লতা শুধু শয্যা সঙ্গী।আজ দশটা বছর অতিক্রান্ত হলো।দু’সন্তানের মা হয়েছে।অথচ ঢাকা শহরের কোথায় কি আছে লতা জানে না। বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়া ছাড়া বাহিরে বের হওয়া হয়না।সন্তান লালন পালন এবং সংসার সামালানোই লতার দায়িত্ব। অন্যদিকে তাকানোর অবসর তার কোথায়?পান থেকে চুন খসলেই তমাল উচ্চবাক্য শোনায়।ওর দুটো মেয়ে হয়েছে,সেই দোষও লতার।

তোমাদের বংশে ছেলে সন্তান নেই, এরজন্য তোমারও মেয়ে হয়েছে। স্বামীর কটুক্তিতে লতা নিরবে অশ্রু ফেলে।
মাঝে,মাঝে মা,বাবা আর বোনদের সাথে ফোনালাপ করে লতা নিজেকে একটু হালকা করে।আর অবসরে লেখালেখি করে নিজের মনের দুঃখ গোছাতে চেষ্টা করে।স্বামীর কাছে লতা শুধু বউ হওয়ার মন্ত্র শিখেছে।ওর জীবনেও যে আনন্দ-বেদনা,ভালো-মন্দ আছে সেই শিক্ষা তমালের কাছে পায়নি।

সারাদিন অফিস,আর বাড়িতে এসে পত্রিকা,মোবাইল নিয়ে তমাল ব্যস্হ থেকেছে। আর তাই লেখিলেখির মাঝে লতা নিজের আনন্দ খুঁজে পায়। দেশের নামকরা একজন লেখক এবং প্রকাশক লতার লেখায় এত মুগ্ধ হন।তিনি পত্রিকা অফিস থেকে লতার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে লতার সাথে যোগাযোগ করেন। ভদ্রলোক নিজ উদ্যোগে লতার লেখা সম্বলিত একটি কাব্যগ্রন্হ প্রকাশের জন্য লতার অনুমতি প্রার্থনা করেন।লতা অবাক হয়ে যায়,তার জন্য এ এক বিরাট ব্যাপার।

এক সকালে রেজিট্রি ডাকে লতার নামে একটা চিঠি আসে।চিঠিটা পড়ে আনন্দে লতার চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ে।আপনার লিখিত বইটি বাংলা একাডেমী কর্তৃক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। আগামী সোমবার বিকাল ৪ ঘটিকায় আপনাকে সেই সন্মানী প্রদান করা হবে। অনুষ্টানে আপনি সপরিবারে আমন্ত্রিত। লতার কাছে পুরো ব্যাপারটা জেনে তমাল অবাক হয়ে যায়। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এতদিন যাকে এতটুকু মূল্য দেয়নি, সে কিনা এত বড় সন্মানের অধিকারী!

আজ সোমবার। তমাল অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। অনুষ্টানে যাওয়ার জন্য লতার চেয়ে যেন তমালের আগ্রহ বেশী।কোন শাড়িতে লতাকে মানাবে, সে চয়েজ করে দিলো।বাচ্চাদের জামা কাপড় নিজ হাতে পড়িয়ে দিলো।তারপর ট্যাক্সি ডেকে সবাই মিলে অনুষ্টানের দিকে রওয়ানা দিলো।লতার কাছে মনে হলো পৃথিবীর সকল সুখ আজ তার দ্বারে এসে দাড়িয়েছে।

(যুক্তরাজ্য প্রবাসী)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here