লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি এম এ মোমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেগম কামরুন্নাহার। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা আলামত সংগ্রহ করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ১ নভেম্বর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে বলে তিনি জানান।
পুলিশের ভাষ্য, ঘটনাটি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা বুড়িমারী ইউপি চত্বরে জমায়েত হয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দুজনকে মারধর করেন। পুলিশ জোবায়েরকে সরিয়ে নিতে পারলেও শহীদুন্নবীকে উদ্ধার করতে পারেনি। সেখানেই গণপিটুনি দিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় তাঁকে।
বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী বলেন, পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে দুই ব্যক্তিকে মারধর করলে ইউপি সদস্য হাফিজুল তাঁদের নিয়ে যান।
ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তাঁদের নিয়ে এসে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে তালা দিয়ে রেখে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের খবর দিই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ছিল যে তাঁদের পরিচয়ও নিতে পারিনি। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষের লোকজন এলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। লোকটাকে কেউ বাঁচাতে পারল না!’
নিহত শহীদুন্নবী রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়ে এবার এইচএসসির পাস করেছেন ও ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শুক্রবার সকালে শহীদুন্নবীর শালবনের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসীসহ আত্মীয়স্বজনের ভিড়। শহীদুন্নবীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার আহাজারি করছেন। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী অনেক সহজ সরল ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। যারা গুজব ছড়িয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’
স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে ২০১৬ সালে চাকরি চলে যাওয়ায় শহীদুন্নবীর একমাত্র উপার্জনপথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে সব সময় ওষুধ সেবন করতেন।
শহীদুন্নবীর বোন হাছনা আক্তার বলেন, মানসিক যন্ত্রণার কারণে তাঁর ভাই ভারতীয় ওষুধ খেতেন। তাই সীমান্তের বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় চেনাজানা মানুষজনের কাছে ওষুধ আনাতে গিয়েছিলেন।