আমার এই প্রিয় স্যারের কিছু স্মৃতি আপনাদের সঙ্গে আমি শেয়ার করলাম। সেদিনের সেই মুহূর্তগুলি আমার কাছে পৃথিবীর অন্যরকম একটি দিন ছিল। যে দিনটির সূর্য আমার স্মৃতিতে এখনো অস্তমিত হয়নি।

এই লিখাট শীর্ষবিন্দু পত্রিকায় ২৬ জানুয়ারী প্রকাশিত হয়। আজকে আমি আবারো আপনাদের কাছে শেয়ার করলাম।

আজকের দিনটা খুবই সুন্দর সূর্য উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। তবে সেটা প্রকৃতিগতভাবে নয়। আমার মনের আনন্দের। যেখানে আমার মনের ব্যারোমিটারে একেবারে আনন্দের বন্যায় উচ্ছলিত করছে। যদি বলি ভালবাসার প্রকাশ করতে তাহলে বলতে পারি অনেক তুঙ্গে তার অবস্থান।

এই সুন্দর সন্ধ্যা মায়াবী আবেগময়। যদিও লন্ডনের তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি, বাংলাদেশে যাকে হাড় কাঁপানো শীত বলে। তারপরও আমি আনন্দ অশ্রুতে, আবেগে ঘর্মাক্ত। কারন আমার ছোটবেলার স্কুলের আমার শ্রদ্ধেয় স্যার এসেছেন আমার ঘরে।

১৯৭৬ এর জানুয়ারি মাসে স্যারকে আমি প্রথম স্কুলে দেখি। আর এই জানুয়ারীদে ২০২০ সালে আবার স্যারকে কাছে পেয়ে স্যারের আদরে আপ্লূত হই। আমি যখন ‘ইয়ার সিক্স‘-এ ভর্তি হই তখন আমার সেকশন ছিল ‘এ‘। আর তখন থেকে স্যারই ছিলেন আমার মাধ্যমিক স্কুল পাঠদানের প্রথম শিক্ষা গুরু। দি এইডেড মালটিলেটারেল উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহন তখন থেকেই শুরু।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত সময়কাল উনার সান্নিধ্যে ছিলাম। আজ এতদিন পর ক্লাস ও সময়ের উচ্চতায় আমার শ্রদ্ধেয় স্যার ও আমি, আমরা অন্য একটা মায়ার আবেগের বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। যা কিনা আজ দীর্ঘ ৩৯ বছর পর অশ্রু হয়ে কথা বললো। আমি এতোই আবেগপ্রবন ছিলাম যে, স্যারকে গাড়ি থেকে নামতে দেইনি, স্যারকে জড়িয়ে ধরেছি, উনার গালে গাল লাগিয়ে আনন্দ-শ্রদ্ধা-ভালোবাসার আলিঙ্গনে অশ্রু দিয়ে বরন করলাম।

আর স্যারও সেই আগের মতোই আমাকে উনার দুই হাত দিয়ে আমার মাথা-মুখমন্ডল আদর করে মুচে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। উনার এই হাতটা, এই মায়াময় পরশ একেবারেই সেই পরশের মতোই যা ছিল আমার মায়ের স্পর্শ-বাবার আদর। একই হয়তো বলে ছাত্র-শিক্ষকের ভালোবাসা।

প্রথাগতভাবে, শিক্ষকের পা ছুয়ে কদমবুচি করে সামনে না বসারই কথা। যা আমাদের দেশীয় সমাজের প্রেক্ষাপটে দৃশ্যমানয় নয়। কিন্তু কিছু শিক্ষক তার ছাত্রদেরকে ভালোবেসে এমন পর্যায়ে পৌছে দেন তখন উনারা প্রথার অনেক উর্ধে চলে যান। উনারা শিক্ষক থেকে হয়ে যান মানুষ গড়ার কারিগর।

উনাদের মর্যাদা পিতা-মাতার কাছাকাছি পৌছে যায়। আর তেমনি একজন শিক্ষক তিনি আমাদের ফজলুর রহমান স্যার। আমাদের জীববিদ্যা শিক্ষাদানকারী পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। আমার গুরুজন আমার মহামান্য শিক্ষক।
তাইতো আজ উনার আগমনে জানুয়ারীর শীতল তীব্রতা, ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায় উষ্ণায়িত। আমি খুব পুলকিত। আমি আবেগে ভালোবাসায় আপ্লুত। এটা একান্ত সম্ভব হয়েছে তাঁর ত্যাগের মহিমায়
আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমার বন্ধু ও স্কুলের সহপাঠি ইঞ্জিনিয়ার মুকুলকে আমাদের প্রিয় ফজলুর রহমান স্যারের লন্ডন সফরে আসার খবর জানানো ও যোগাযোগের মাধ্যমে সুযোগ করে দেয়ার জন্য।

একই সাথে স্যারকে আমার বাসায় নিয়ে আসার জন্য ও ছাত্র-শিক্ষকের এই আবেগঘন ভালবাসার বহি:প্রকাশ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য উনার জামাতা দিলওয়ার সাহেবকে আমার মনের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। স্যারের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করি ও উনার পরিবারের সকলের সুখ-সমৃদ্ধি-সুস্থতা কামনা করছি।

লেখক: মোহাম্মদ ছালিকুর রহমান চৌধুরী, প্রাক্তন
দি এইডেড হাই স্কুল সিলেট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here