করোনা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ করতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যা করছে বাংলাদেশও মোটামুটি এখন তা করছে। যেমনঃ সেলফ-আইসলেশন, কোয়ারেনটাইন, সোশাল ডিসটেন্সিং, লকডাউন, সেনা মোতায়েন, ঘরে বসে অফিসের কাজ করা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ইত্যাদি। ব্রিটেন ৭০ ঊর্ধ্ব বয়সের মানুষদের আলাদাভাবে বলে দিয়েছে, তারা যাতে কোন কারণেই ঘর থেকে বাহিরে না যায়। কারণ, তাদের দেখাশোনার পুরো দায়িত্ব সরকারের।

তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরও কঠিন পদক্ষেপ অথবা শিথিল করতে পারে ব্রিটিশ সরকার। জরুরি এই সময়ে সরকারের স্লোগান হলঃ STAY HOME, PROTECT THE NHS, SAVE LIVES. অর্থাৎ ১) ঘরে থাকো, ২) ঘরে না থাকলে অসুস্থ লোকের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাবে; এনএইচএস (সরকারী হাসপাতাল) এতো রোগীর চিকিৎসা দিতে পারবে না; ফলে এনএইচএস ভেঙে পড়বে; এজন্য এনএইচএস এর উপর চাপ কমিয়ে সেটিকে রক্ষা করার আহবান জানাচ্ছে সরকার, ৩) মানুষের জীবন বাঁচান, অর্থাৎ, আপনি যদি ঘরে থাকেন তাহলে অসুস্থ হয়ে কম মানুষ হাসপাতালে যাবে। ফলে সক্ষমতা অনুযায়ী অসুস্থদের চিকিৎসা দেয়া যাবে এবং বিনা চিকিৎসা অথবা কম চিকিৎসায় মানুষ মারা যাবে না।

গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতালে রোগীর ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোপরি সকল করোনা রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য। বিষয়টা অনেকটা নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে, স্লুইস গেট স্থাপন করে পানির স্রোত নিয়ন্ত্রণের মতো। যদি সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানবসম্পদ ও যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত না থাকে, তাহলে এর প্রভাব হবে অনেক বেশি ভয়ানক।

গাণিতিক এই মডেলে হিসাব করে অনুমান করা হয় কবে নাগাদ সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ রোগে আক্রান্ত হবে। এই পর্যায়কে বলা হয় পিক (PEAK)। এরপরই সংক্রমণ এবং আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কমতে শুরু করে।এই মডেলকে মাথায় রেখে আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে একটি চিঠি পাঠিয়ে তাতে লিখেছেনঃ সংকট কেটে যাওয়ার আগে আরও খারাপ হবে। অর্থাৎ, দেশবাসীকে তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বললেন। ৩০ মিলিয়ন ঠিকানায় পাঠানো এই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেনঃ প্রয়োজন হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার।

বাংলাদেশে এরকম কোন মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে না। মানুষকে ঘরে রেখে সংক্রমণ কমানো গেলে অনেক জীবন রক্ষা করা যাবে ঠিকই। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে কতো সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে এবং সর্বোচ্চ কতো সংখ্যক লোককে একসাথে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে, সে সম্পর্কে দেশবাসীকে জানানো সরকারের দায়িত্ব।

কোন দেশের সরকার ও জনগণই চায়না অনির্দিষ্টকালের জন্য এরকম একটা অচলাবস্থায় আটকে থাকতে। এজন্যই গাণিতিক মডেল অনুসরণ করছে উন্নত দেশগুলো। ইতালি বলছে, তারা এই মুহূর্তে পিক (PEAK), অর্থাৎ চরম পর্যায় অতিক্রম করছে।

আজ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলতে শুনলামঃ

“অনেকে বলছে, সংখ্যা এত কম কেন। কেন, সংখ্যা বেশি হলে কি আমরা খুশি হই? আমরা কি চাই বেশি বেশি লোক সংক্রমিত হোক? বেশি বেশি লোক মৃত্যুবরণ করুক? আমরা তো চাই আমাদের দেশের লোক সংক্রমিত না হোক। আমাদের দেশের লোক মৃত্যুবরণ না করুক। এটিই সবচেয়ে বড় বিষয়।‘’

এইরকম একটা হাস্যকর কথা সরকারের মন্ত্রী কিভাবে বলেন!!!???

বিষয়টা পুরোটাই হচ্ছে তথ্য জানার অধিকারের বিষয়। করোনা রোগী বাড়লে খুশি হওয়ার বিষয় না। মানুষ যত জানবে ততো সচেতন ও সাবধান হবে; প্রস্তুতিও নেবে।

সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী যখন এই ধরনের অদ্ভুত কথা বলেন তখন ধারনা করে নিতেই হয়, সরকার আসলে কোন মডেল অনুসরণ করছেনা। অর্থাৎ, আধুনিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে না গিয়ে প্রাকৃতিক, অর্থাৎ, আল্লাহ ভরসা পদ্ধতি অনুসরণ করছে।

আব্দুল হাই সঞ্জু
লন্ডন
২৯ মার্চ ২০২০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here